নিত্যপণ্যও এখন বিলাসী পণ্য!
নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
বন্যা আর সরবরাহ ঘটতির অজুহাতে বাজারে টানা তিন সপ্তাহ ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সবজির দাম। সবজির বাজারে যেন লাগাম দেওয়ার কেউ নেই। নতুন করে কয়েকটির দাম আরও বেড়েছে। ফলে হাতেগোনা তিন-চারটি ছাড়া বেশির ভাগ সবজির দর শতক ছাড়িয়েছে। শুধু বরিশাল নগরীতে নয়, উৎপাদন এলাকায়ও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে শাকসবজির। ফলে সীমিত আয়ের মানুষের কাছে সবজিও হয়ে উঠেছে অনেকটা বিলাসী পণ্য। এদিকে মাছ–মাংস–ডিমের দামও বেড়েছে। তবে চিনি, ডিম ও গরুর মাংসের দাম কিছুটা কমতির দিকে। আবার আগের মতোই উচ্চ দরে স্থির রয়েছে চাল, ডাল, তেলসহ কয়েকটি নিত্যপণ্য। তাতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোকে।
সবজির দর বাড়ার পেছনে নানা কারণ তুলে ধরছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা, কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তারা জানিয়েছেন, এ বছর অসময়ে টানা বৃষ্টিতে সবজির চারা ও ফুল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন কমেছে। পাশাপাশি আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করার জন্য অন্য বছরের তুলনায় এবার অধিক পরিমাণ জমি পতিত রাখা হয়েছে। এটিও উৎপাদন কম হওয়ার অন্যতম কারণ।
এদিকে পাইকারি বাজারে পণ্যের দাম কম থাকলেও খুচরা বাজারে এর কোন প্রভাব নেই। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সকল পণ্য।
কাঁচামরিচের দাম ৪০০ টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে, পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে মানভেদে ৯০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি দরে। মুরগি আর মাছের দাম তো আগে থেকেই বাড়তি। বাজারে গিয়ে কোনটা কিনবেন আর কোনটা কিনবেন না, ভেবে হতাশ সাধারণ ক্রেতারা। সরকারের পট পরিবর্তনের ডামাডোলে বাজারদর নিয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত নিম্ন-মধ্যবিত্তদের।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বরিশালের বেশকিছু বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজির দাম বাড়লেও গত সপ্তাহের চেয়ে ডিম, পেঁয়াজের দাম কিছুটা নিম্নমুখী। ১০০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে শুধু চারটি সবজি। এগুলো হলো পেঁপে, পটোল, ঢ্যাঁড়স ও মুলা। পেঁপে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকা দরে। এছাড়া পটোল, ঢ্যাঁড়স ও মুলার কেজি বাজারভেদে ৭০-৯০ টাকা।বেশিরভাগ সবজির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১৪০ টাকা দরে। এরমধ্যে আছে গোলবেগুন, বরবটি, করলা, ঝিঙা, চিচিঙা, ধুন্দলের মতো সবজি। এসব সবজির দাম ১০০ টাকার নিচে নামছেই না।
সবজির খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, গত সপ্তাহের চেয়ে এসব সবজির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা।
বরিশাল পাইকারি কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির একাধিক ব্যাবসায়ীদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, দেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টি অস্বাভাবিক। উত্তরাঞ্চলেরও বেশ কিছু এলাকায় বন্যা হচ্ছে। ফলে ক্ষেতে সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারা আরও বলেন জ্বালানি খরচ, লেবার খরচ সব মিলিয়ে নিত্যপণ্যের দাম রাখা হচ্ছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা হলে বাজারদর কমবে।
এদিকে, আমদানির উদ্যোগ ও শুল্ক কমানোর খবরে গত তিন দিনে ডিমের দাম কমেছে। শুক্রবার প্রতি ডজন ডিম ১৬০/১৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা সপ্তাহের শুরুতেই ১৮০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।
তবে এ সময় ব্রয়লার মুরগির দর কমেনি। এখনো ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকা দরে। সোনালি জাতের মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়। গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, খাসির মাংস কেজি প্রতি ১১৫০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছের দামও লাগামছাড়া। এক কেজি চাষের শিং মাছ (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছ (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৫০০ টাকায়, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১১০০ টাকা, মৃগেল ৩২০ থেকে ৪০০ টাকায়, চাষের পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, চিংড়ি ৭০০ থেকে ১৪০০ টাকায়, বোয়ালমাছ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়, কাতল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়, পোয়া মাছ ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়, মলা ৫৫০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৩০০ টাকায়, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকায়, পাঁচমিশালি মাছ ২২০ টাকায়, রূপচাঁদা ১২০০ টাকা, বাইম মাছ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, দেশি কই ১২০০ টাকা, শোল মাছ ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, আড়ই মাছ ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা এবং কাকিলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল ৮১৮ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, মিনিকেট চাল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
Post Comment