কাঁচা মরিচের ঝালে পুড়ছে বাজার, অন্য পণ্যে অস্বস্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
সপ্তাহজুড়ে টানা বৃষ্টি। এই অজুহাতে বরিশালে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম। একই সাথে সরবরাহ কমে যাওয়ায় হঠাৎ করেই অস্থির হয়ে উঠেছে কাঁচা মরিচের বাজার। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম প্রায় আড়াই থেকে তিন গুণ বেড়েছে। অধিকাংশ কাঁচা পণ্যের দাম ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। তবে দুই তিন দিন আগেও যেটি ছিল ১২০ থেকে ১৮০টাকা, এখন সেটিই মানভেদে বিক্রি হচ্ছে প্রতি তেজি ৩০০/ ৩৫০ টাকায়। টানা বৃষ্টির কারনে মরিচ না আসায় দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বরিশালের বিভিন্ন বাজার ঘুরে কাঁচা মরিচের এমন অস্বাভাবিক দামের চিত্র দেখা গেছে। আগে যেখানে খুচরা দোকানীরা ১৫/২০ কেজি করে কাঁচা মরিচ পাইকারি কিনে এনে বিক্রি করত, এখন অতিরিক্ত দামের কারণে সেই খুচরা বিক্রেতাই মাত্র ৩/৫ কেজি মরিচ এনে বিক্রি করছে। এছাড়া সরবরাহ না থাকায় মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। অন্যদিকে ডিমের বাজারে দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাংলা বাজারে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আরাফাত হোসেন। তিনি বলেন, সবজির দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচের। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় মান ভেদে। দীর্ঘদিন কাঁচা মরিচের এমন উচ্চ মূল্য দেখিনি। আজকের বাজারে ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ কিনলাম ১০০ টাকা দিয়ে। যেখানে কয়েকদিন আগেই আড়াইশো কাঁচা মরিচের দাম ছিল ৩০ টাকা।
কাঁচা মরিচের বাড়তি দাম বিষয়ে সবজি বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ছিল ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, সেই কাঁচামরিচ আজকে বিক্রি করছি প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। মূলত টানা কয়েকদিন বৃষ্টির কারণে বাজারে কাঁচা মরিচ সহ অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ অনেক কমে গেছে। সে কারণে দাম হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, বৃষ্টির অজুহাতে সব ধরনের সবজির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা।
পাইকারি কাঁচাবাজারের একাধিক সবজি বিক্রেতা বলেন, যে কাঁচামরিচ আগের দিন কিনেছিলাম ১০০ টাকা কেজি, সেটা এখন কেনা লাগছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বৃষ্টির কারনে পণ্য আসছে না। যে কারনে দাম বাড়তি। তবে ২/৪ জন পাইকারি ব্যবসায়ীরা মজুত করে দাম বাড়িয়ে দিতে পারেন, এ জন্য দাম একটু চড়া। তবে বৃষ্টি শেষ হলে দাম আবার আগের মতো হয়ে যাবে।
এদিকে প্রতিকেজি টমেটো ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকা, একইভাবে বেগুন ১০০-১২০ টাকা। করলা ১০০ টাকা, পটোল, ঝিঙে, ধুন্দল ৬০-৭০ টাকা, শসা ৫০-৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০-৫০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৩০-৪০ টাকা, কাঁচকলা ৩০-৪০ টাকা হালি, বরবটি ৬০/৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বিক্রেতা সাগর বলেন, কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। অনেক জায়গায় বন্যা হয়েছে। ফলে সবজি আর আগের মতো পাওয়া যাচ্ছে না। সরবরাহ কমে যাওয়ায় দামও বেড়ে গেছে।
সবজির দামের বিষয়ে বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, গেল কয়েক সপ্তাহ ধরে সবজির দাম কিছুটা বাড়তি যাচ্ছে। এছাড়া কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সবজির সরবরাহ কমেছে এবং অনেক সবজির মৌসুম শেষ হয়েছে সবমিলিয়ে সবজির দাম বেড়েছে বাজারে। নতুন করে সবজির মৌসুম শুরু হলে সরবরাহ বাড়বে আর তখন সবজির দাম কমে আসবে।
তবে বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে আলু, মসলা,মাছ ও মাংসের দাম। দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি মানভেদে ৫৫-৬০ টাকা, দেশি আদা ১৩০-১৫০ টাকা, দেশি রসুন ১২০-১৫০ টাকা, আমদানি করা রসুন ২০০-২২০ টাকা, দেশি মসুর ডাল (চিকন দানা) ১৪০ টাকা, আমদানি করা মসুর ডাল (মোটাদানা) ১৩৫-১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সোনালি মুরগির দাম কিছুটা বাড়লেও ব্রয়লার মুরগি আগের মতো ১৮০-১৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে ট্যাংরা, চিংড়ি ১০০-১৩০০ টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৪০০-২৮০০ টাকায়। আকারভেদে রুই ও কাতলের কেজি ৩৫০-৪৫০ টাকা, পাবদা ৪৫০-৫৫০, তেলাপিয়া ও পাঙাশ ২৫০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
Post Comment