Loading Now

বরিশালে ফ্যাসিবাদ বিরোধী মামলা নিয়ে পুলিশ – আইনকর্মকর্তাদের মধ্যে দায়িত্ব নিয়ে রশিটানাটানি!

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

ফ্যসিবাদের মামলাগুলোর বিষয়ে পুলিশি কার্যক্রমে অনেক নেগলেজেন্সি আছে। ফ্যাসিস্টের পতন ও তাদের সময়ের কার্যক্রমে পুলিশের কোন উপলব্ধি হয়নি।পুলিশ আগের মতই আছে।কথাগুলো বলছিলেন বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি আবুল কালাম আজাদ।
বরিশালে জুলাই অভ্যুত্থানের পর বরিশাল মহানগরীর ৪ থানায় দায়ের হওয়া ২০টি মামলার কার্যক্রম নিয়ে মামলাগুলোর বাদিসহ আইন কর্মকর্তা এবং পুলিশের বক্তব্য পরস্পর বিরোধী এবং একে অপরের উপর দায় চাপিয়ে দায়িত্ব নিয়ে চলছে রশি টানাটানি। আইন কর্মকর্তা বলছে পুলিশের দায়িত্ব অবহেলা আর পুলিশ বলছে তারা ঠিকই আছে।এই রশি টানাটানির ফলে বরিশালে আওয়ামী লীগের নেতা ও জুলাই বিপ্লবের সন্ত্রাসীরা পাড় পেয়ে যাচ্ছেন।

২০২৪ সালের জুলাইয়ে বরিশালের জনপদ ছিলো নিত্য উত্তাল। প্রায় প্রতিদিন তৎকালীন সরকার পক্ষের হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হতে হয়েছে পদে পদে। অভ্যুত্থান সফলের পর এসব ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ৪টি থানায় দায়ের করে ২০টি মামলা। এসব মামলায় ১৪৯৫ জনকে নামধারীসহ আসামি করা হয় ৫২৩৭ জনকে। বেশিরভাগ মামলারই বাদি হচ্ছে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মিরা। পুলিশ এসব মামলা থেকে ৭টি মামলাকে অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে কার্যক্রম চালাচ্ছে। কিন্তু এতে খুশি নয় মামলার বাদিসহ সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি পুলিশি কার্যক্রম পক্ষপাতদুষ্ট, দৃশ্যমানহীন ও ধীরগতির। তারা দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচার চেয়েছেন। এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মারজুক আবদুল্লাহ ও সুলতান আহমেদের দায়ের করা মামলায় পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে। এ মামলাগুলোও পুলিশ যাচাই-বাছাই করে আসামী গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে এসব মামলায় নিরীহ কাউকে জড়ানো হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করছে বলে পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

বরিশাল মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আফরোজা খানম নাসরিন বলেন, আমাদের অন্যায়ভাবে ধরে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হতো। তখন আমরা ন্যায়ের পথে যুদ্ধ করেছিলাম। আমার নামে ছিলো ৫৪টি মামলা। ৯বার আমি জেল খেটেছি, নির্যাতন করে আমার মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়া হয়। এসব কারনে আমরা মামলা করেছি কিন্তু এসব মামলায় দৃশ্যত কোন ফল আমরা পাচ্ছিনা। যারা এতো নির্যাতন করেছে তাদের ধরে বিচারের কাঠগড়ায় নেয়া হচ্ছে না। আসামি ধরে থানায় দিলেও দুদিন পর তারা বের হয়ে যাচ্ছে। এখন পুলিশ কোন কাজ করছে না অথচ আমাদের নামে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা দিয়েছে। এখন তারা আসামিদের ধরছে না, অনেক আসামিই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশের অনিহার কারনেই অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, আমরা আমাদের প্রত্যাশার ক্ষেত্রে ঘাটতি দেখতে পাচ্ছি। এজন্যই এখন জনগন আওয়ামীলীগ ধরে পুলিশে দিচ্ছে। আমাদের মতো সারা দেশের জনগনের মধ্যেও ক্ষোভ আছে, আছে হতাশা ও রাগ । সরকার ও প্রশাসনের এ ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়া উচিত। ভুয়া কোন মামলা আমাদের দ্বারা হয়নি। সব মামলারই প্রমান রয়েছে।
পুলিশ সুত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ ৭ মামলার ৭৬৫ জনকে নামধারীসহ মোট আসামি করা হয়েছে১৯৮৭ জনকে। এদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, চেয়ারম্যানসহ ৭১ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একই সাথে আরো ১৮৯ জনকে সন্দেহজনক হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২২ জন আদালতে আত্মসমর্পন করেছে। বরিশালে যারা এসব মামলার সরকারি আইন কর্মকর্তা
তাদের ভাষ্য হলো পুলিশ যদি উপলব্ধি করতো তবে বরিশালের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা নিয়ে আমাদের সাথে এতো দূরত্ব হতো না। আইন অনুযায়ী পুলিশ পিপির সাথে কিংবা রাষ্ট্র পক্ষের সাএ আলোচনা করবে। আমরা বারবার পুলিশকে একথা স্মরণ করিয়েছি যে বর্তমান প্রেক্ষাপটের মামলার সিডি নিয়ে পিপির মতামত নেয়া হলে আমরা তা দিতে পারতাম। এছাড়া পুলিশ আসামী গ্রেফতার করে আদালতে ফরওয়ার্ডিং দিলে নিয়মানুযায়ী রাষ্ট্র পক্ষকে জানাবে কিন্তু সেটাও পুলিশ করে না।ফলে অনেক সময় রাষ্ট্রপক্ষের মতামত না পেয়ে আদালত আসামীদের জামিন দিয়ে দেয়।এতে বদনাম হয় আমাদের।এখন পুলিশের ভুমিকার কারনে ৫ আগস্টের পরের মামলাগুলো নিয়ে আমি আশংকার মধ্যে আছি। পুলিশ যেভাবে একের পর এক মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দিচ্ছে, দুর্বল ত্রুটিপূর্ণ চার্জশীট দিচ্ছে যা আমাদের সংকটের মধ্যে ফেলছে। পুলিশের বর্তমান অবস্থান আমাদের জন্য শুভ নয়।
তবে আইন কর্মকর্তাদের এ বক্তব্য মানতে নারাজ পুলিশ। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের শীর্ষ একাধিক কর্মকর্তার দাবী,বিএনপি তাদের একাধিক মামলায় আওয়ামী লীগের প্রকৃত অপরাধী ও যারা সন্ত্রাস করেছে তাদের সেইভ করে নিয়েছে। আমরা জুলাই বিপ্লবের ভিডিও ফুটেজ এ বিএনপির অফিস পোড়ানো ঘটনায় জড়িত ছিলেন এমন অনেকেই ঐ মামলায় আসামী নেই কিন্তু দেখেছি বানারীপাড়া ও নলছিটি থেকে আসামী করা হয়েছে। তারা তাদের মামলাগুলোতে কোন নারী নেত্রীকে আসামী করে নি অথচ নারী আওয়ামী লীগের নেত্রীরা জুলাই আগষ্ট বিপ্লবে সক্রিয় ছিল এবং তারা এখনো পুরুষ নেতাদের চেয়ে বেশি সক্রিয় আছে। তাদের নামে মামলা না থাকায় আমরা ব্যবস্থা নিতে পারছি না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগে কাুকে  গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরন করলে আদালত  এজাহারনামীয় আসামী চায়।এর পাশাপাশি  আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সন্ত্রাসীদের আটক করলে মহানগর বিএনপির নেতারা তদবির করেন,মামলার বাদী ফোন করে ছেড়ে দিতে বলেন। আর আইনজীবীরা আদালতের মধ্যে লাখ টাকার বানিজ্য করেন। তারা নিয়মানুযায়ী সকল আসামীর ফরোয়ার্ডিং খবর পান ইচ্ছে করে নিজেদের হাজিরা জমা দেন না।তাদের বিবেক আগে ঠিক করুক।পুলিশ ঠিকমতই দায়িত্ব পালন করছে।
সার্বিক বিষয়ে কথা হয় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলামের সাথে তিনি বলেন,
এই মুহূর্তে আমাদের ৮টি মামলার মধ্যে একটির চার্জশীট হয়ে গেছে। অন্যগুলোর তদন্ত চলছে। ঐ সময় যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তার ভিডিও ফুটেজসহ আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে। এগুলো যাচাই বাছাই করে যা সঠিক হবে তাই করা হচ্ছে। যদি কেউ বলে থাকে যে আমরা কাজ করছি না তবে সেটা ভুল। যদি কেউ বলে থাকে যে আসামি ঘুরে বেড়াচ্ছে তবে সেটা তার ব্যক্তিগত শত্রুতা। আমার জানামতে এসব মামলায় যারা জড়িত ছিলো তাদের ধরা হচ্ছে। খুব দ্রুত সব মামলার কার্যক্রম শেষ হবে।

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED