পঞ্চদশ সংশোধনই হাসিনাকে স্বৈরাচারে পরিণত করেছিল: বদিউল আলম মজুমদার
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতায় এলেও শেখ হাসিনা এক স্বৈরাচারী শাসকে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁর সরকারের নেওয়া দমনমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনরোষ থেকে একটি গণ–অভ্যুত্থান ঘটে, যার ফলে তিনি দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
আজ শনিবার (১৯ জুলাই) দুপুরে বরিশালের সদর রোডে বিডিএস মিলনায়তনে ‘জাতীয় সনদ ও নাগরিক প্রত্যাশা’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বদিউল আলম মজুমদার। সংলাপটির আয়োজন করে সুজন। শেখ হাসিনার সমালোচনা করে এ সময় বদিউল আলম আরও বলেন, শেখ হাসিনা ট্যাংকে চড়ে বা খাকি পোশাকে ক্ষমতায় আসেননি, ২০০৮ সালের একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তিনি ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তিনি এমন একটি শাসনব্যবস্থা কায়েম করেন, যা মানুষের অধিকার হরণ করেছে ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে দিয়েছে।
শেখ হাসিনা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলেন, কিন্তু তিনি কীভাবে স্বৈরাচারে পরিণত হলেন—সেই প্রশ্ন তুলে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘শেখ হাসিনা স্বৈরাচারীর প্রতীকে পরিণত হলেন, কারণ স্বৈরাচারী ব্যবস্থা আমাদের দেশে বিরাজমান ছিল। কতগুলো বিদ্যমান নীতি, নিয়মপদ্ধতি, প্রতিষ্ঠান, আইন-কানুন সেগুলো কিন্তু শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচারে পরিণত করেছে। এ ছাড়া তিনি কিছু কিছু আইন-কানুনে পরিবর্তন এনেছেন, সংবিধান সংশোধন করেছেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী করেছেন।’
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ হাসিনা নিজেকে স্বৈরাচার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন বলে মন্তব্য করেন সুজন সম্পাদক। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ও গণভোট পদ্ধতি।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে সুজন সম্পাদক বলেন, এই সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, যার মধ্যে একটি ‘ঐকমত্য কমিশন’। এই কমিশন কাজ করছে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে মৌলিক সংস্কারের বিষয়গুলো চিহ্নিত করতে। কিন্তু সংবিধান জনগণের অধিকারের রক্ষাকবচ। তাই জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, প্রশাসনিক কাঠামো এবং দুর্নীতি প্রতিরোধসংক্রান্ত কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে। এ লক্ষ্যেই সুজন সারা দেশে ১৫টি নাগরিক সংলাপ আয়োজন করেছে।
সুজন বরিশাল জেলা কমিটির সভাপতি গাজী জাহিদ হোসেন সংলাপে সভাপতিত্ব করেন। এতে বক্তব্য দেন সুজনের বরিশাল মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল মোতালেব, জেলা সম্পাদক রনজিৎ দত্ত, বরিশাল জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা, সুজনের বরগুনা জেলা সাধারণ সম্পাদ জিএম কাদের, পটুয়াখালী জেলা সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলামসহ অন্যরা। এতে বরিশালের সব জেলা, উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিরা অংশ নেন এবং মতামত দেন।
অনুষ্ঠানে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্কারপ্রক্রিয়া নিয়ে মতামত গ্রহণ করছে। সেখানে নাগরিক সমাজের মতামত নেওয়া হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে নাগরিকদের মতামত অবশ্যই থাকা উচিত। এ জন্য এই নাগরিক সংলাপের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সারা দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে নেওয়া এসব মতামত একত্রিত করে ২৬ জুলাই ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে।
Post Comment