Loading Now

বেওয়ারিশ কুকুরের দখলে নগরী, আতঙ্কে পথচারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

বরিশাল মহানগরীতে ২৫ হাজার মানুষ বেওয়ারিশ কুকুরের আক্রমনের শিকার হয়েছেন। গত কয়েক বছর ধরে এ নগরীতে ২০-২৫ হাজার মানুষ এসব বেওয়ারিশ কুকুরের হিংস্রতার শিকার হচ্ছে বলে জানা গেছে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার আলোকে সরকারি নির্দেশনায় বেওয়ারিশ কুকুর নিধন বন্ধ থাকায় সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের মত বরিশাল মহানগরীতেও বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ায় জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের মুখে। আতংকিত সাধারন পথচারী। নারী ও শিশুরা চরম নিরাপত্তহীনতায়। সদ্য শুরু হওয়া ভাদ্রমাস কুকুরের প্রজনন মৌসুম বিধায় এসময়ে বেওয়ারিশ কুকুরের আচরণে নানা ত্রুটি লক্ষ্য করা যায়। এসময়ে ক্ষিপ্ত ও ক্ষুধার্ত বেওয়ারিশ কুকুর সাধারন মানুষের ওপর হামলা করে।
সদ্য সমাপ্ত অর্থ বছরেও বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল থেকে কুকুরে আক্রমনের শিকার ১০ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুকে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী ‘এআরভি’ প্রদান করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরেও প্রায় অনুরূপ ইনজেকশন প্রদান করা হয়। তবে এ ভ্যাকসিনের সংখ্যাও চাহিদার ৬০ভাগের বেশী নয় বলে জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বশীল মহল। তাদের মতে প্রতিমাসেই সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরে ভেকসিনের চাহিদা দেয়া হলেও সরবরাহের হার কখেনোই অর্ধেকের বেশী নয়। ফলে যে পরিমান কুকুরে কামড়ানো রোগী আসছে, তার ৬০ ভাগের বেশী আমরা ভ্যাকসিন দিতে পারছিনা। ফলে অনেকেই নানা ধরনের ঝাড়ফুক সহ ‘আখেরগুড় পড়ার মত সনাতন ‘টোটকা পদ্ধতির চিকিৎসা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকেই প্রয়োজনের অনেক পরে ভ্যাকসিন পাচ্ছেন। সব মিলিয়ে চাহিদার অর্ধেক থেকে ৬০ ভাগের বেশী রোগীকে এআরভি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

উচ্চ আদালত সহ সরকারি নির্দেশনার আলোকে বণ্যপ্রাণীর মত বেওয়ারিশ কুকুর নিধন বন্ধ হয়ে যাবার পরে বরিশাল মহানগর সহ সমগ্র দক্ষিণের জনপদজুড়ে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে খাবার সংকটে নিয়ন্ত্রনহীন এসব প্রাণী ক্রমশ হিংস্র হয়ে উঠছে। মারাত্মক সামাজিক সমস্যার সাথে নিরাপত্তা নিয়েও যে সংকট তৈরী হয়েছে, তা নিয়ে কোন সমন্বিত ভূমিকা পালন করছেনা বরিশাল সিটি করপোরেশন এবং প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর সহ স্থনীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ প্রতিনিয়ত বেওয়ারিশ কুকুরের হামলার শিকার হচ্ছেন সাধারন মানুষ।

চক্রাকারে এসব বেওয়ারিশ প্রাণীর লাগামহীন প্রজনন অব্যাহত থাকায় ক্ষুধার্ত ও ক্ষিপ্ত কুকুর রাত বাড়ার সাথে বরিশাল মহানগরী রাস্তাঘাটের দখল নিচ্ছে। গভীর রাতে ও প্রত্যুষে পথচারীদের দেখলেই তাড়া করছে বেওয়ারিশ কুকুরের দল। এমনকি পথচারীর হাতে কোন ধরনের খাবারের প্যাকেট থাকলে তা রাস্তায় ফেলে না দেয়া পর্যন্ত একাধিক কুকুর তাকে ঘিরে ধরে কামড়াতে উদ্যত হচ্ছে। ফলে প্রাণ বাঁচাতে শুধু খাবার নয়, হাতের সব কিছু ফেলে দৌঁড়ে পালাতে বাধ্য হন অনেক পথচারী।
বরিশাল মহানগরীর মত সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলজুড়েই বেওয়ারিশ কুকুর এখন একটি প্রকট সামাজিক সমস্যায় পরিনত হয়েছে। অথচ খোদ বরিশাল মহানগরীতে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা নগরভবনের কাছে নেই। তবে ২০২২সালে প্রায় ৫ হাজার বেওয়ারিশ কুকুরকে জলাতঙ্ক প্রতিরোধি ভ্যাকসিন প্রদানের পরে অতি সম্প্রতি আরো ৩ হাজার ৬শ বেওয়ারিশ কুকুরকে অনুরূপ ভ্যাকসিন প্রদানের কথা জানিয়েছে নগর ভবনের প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা।

সিটি করপোরেশনের প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ও জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার মতে-যেসব কুকুরকে টিকা প্রদান করা হয়েছে, তাদের কামড়ে জলাতঙ্কের কোন আশংকা থাকেনা। তাদের মতে কোন পরিসংখ্যান না থাকলেও নগরীর অন্তত ৮০-৯০ ভাগ কুকুরকে ভ্যাকসিন প্রদান সম্ভব হয়েছে। কোন কুকুরকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে তা শনাক্ত করার কোন উপায় না থাকায় নিরাপদ কুকুরে কামড়ালেও সবাই এআরভি গ্রহণের জন্য হাসপাতালের স্মরনাপন্ন হচ্ছেন।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, সরকারি নির্দেশনায় নিধন বন্ধ থাকায় আমরা ভ্যাকসিন প্রদান করে বেওয়ারিশ কুকুরগুলোকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করছি।
আগের নগর পরিষদের সময় বরিশাল মহানগরীর বেওয়ারিশ কুকুরগুলোকে বন্ধ্যাত্ব করনের একটি উদ্যোগ গ্রহন করা হলেও পরে তা থমকে যায়। ২০২৩ সালে নির্বাচিত সিটি মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের পরে নগরীর বেওয়ারিশ কুকুরগুলোকে দূরে একস্থানে নিরাপদে লালন পালনের কথা বললেও পরে তাও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে পুরো বরিশাল মহগানগরীর রাত থেকে ভোর এখন বেওয়ারিশ কুকুরের দখলে।

এসব বিষয়ে বরিশালে বিভাগীয় প্রাণী সম্পদ গবেষনা প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল সাইন্টিফিক অফিসারের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, বরিশাল মহানগরী সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলেই একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরী করছে। বণ্যপ্রাণীর মত বেওয়ারিশ কুকুর নিধনেও নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব প্রাণীর বন্ধ্যাত্ব পদ্ধতির কোন বিকল্প নেই। আর সে লক্ষ্যে দক্ষ প্রাণী সম্পদ শল্য চিকিৎসক সহ নিরাপদ অবকাঠামো প্রয়োজন। সরকারী নির্দেশনা পেলে সিটি করপোরেশন সহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় তা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তিনি। তবে সব কিছুর আগে বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা জরুরী।

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED