Loading Now

বিভাগীয় বন কর্মকর্তার ১৪ বিয়ের তদন্তে বরিশাল এলেন যুগ্ম সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

একটি দুটি কিংবা চারটি নয় একে একে ১৪টি বিয়ে করেছেন বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কবির হোসেন পাটোয়ারী। অভিযোগ উঠেছে ঘর-সংসার করার উদ্দেশ্যে নয় মূলত নারীদের সর্বনাশ করাই তার এক ধরণের নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দায়েরের পর শুরু হয়েছে তদন্ত। গতকাল কবির হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্তে সরেজমিনে বরিশাল আসেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সাইদুর রহমান। তিনি নগরীর কাশিপুরে অবস্থিত কোস্টাল অফিসে অভিযুক্ত বন কর্মকর্তা এবং অভিযোগকারী দুই স্ত্রীর সাক্ষাতকার গ্রহণ করেন। এ সময় সেখানে আরো অনেক নারী মানববন্ধন করেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তাদের অভিযোগ বন কর্মকর্তা একজন নারীলোভী, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এবং প্রতারক। চাকরি দেওয়ার কথা বলে অনেকের কাছ থেকে সে টাকা নিয়েছে। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া তদন্ত চলে দুপুর পর্যন্ত। যুগ্ম সচিব প্রথমে অভিযোগকারী খাদিজা আকতার ও নাসরিন আকতার দোলার সাথে কথা বলেন। সবশেষ কথা বলেন অভিযুক্ত বিভাগীয় বন কর্মকর্ত কবির হোসেন পাটোয়ারীর কাছে। এ জন্য একজন আইনজীবী নিয়োগ করেন বন কর্মকর্তা।

অভিযোগকারী খাদিজা আক্তার বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে তাকে বিয়ে করেন কবির হোসেন পাটোয়ারী। বিয়ের দ্বিতীয় দিনই তার (স্ত্রীর) বাবার বাড়ির ভবনের দ্বিতীয় তলা লিখে দিতে বলেন সরকারি এ কর্মকর্তা। রাজি না হওয়ায় মারধর করে বের করে দেওয়া হয় বাসা থেকে। এরপর ৯ এপ্রিল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী নারী।

বিদেশে পড়াশোনা, সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়া, গাড়ি-বাড়ির প্রস্তাবসহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে বিয়ে করেন সরকারি এ কর্মকর্তা। এরপর বেশ কয়েক দিন দৈহিক চাহিদা পূরণের পরই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে গৃহত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। ভুক্তভোগীরা থানা, আদালত, এমনকি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েও পাচ্ছেন না কোন ধরণের প্রতিকার। কারণ সাবেক মন্ত্রী দিপু মনির ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবে পরিচিত ছিলেন কবির হোসেন পাটোয়ারী। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথেও রয়েছে তার সখ্যতা।

চাকরি দেওয়ার কথা বলে ২০১৭ সালে বাগেরহাটের মোংলা এলাকার নাসরীন আক্তার দোলনকে বিয়ে করেন কবির হোসেন। কিছুদিন না যেতেই তাকে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন শেষে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেন। সেই নির্যাতনের ভয়াবহতা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন ভুক্তভোগী ওই নারী। এ নিয়ে গত ৫ বছর ধরে আদালতে মামলা চললেও মিলছে না কোন ধরণের প্রতিকার।

চাঁদপুর জেলার তুষপুর গ্রামের মোশাররফ হোসেন পাটোয়ারীর ছেলে কবির হোসেন এর আগে ঢাকা, খুলনা, সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত ছিলেন। বন বিভাগের এই উচ্চ পদ ব্যবহার করে মূলত ফাঁদে ফেলেন অনেক নারীকে।
কবিরের একাধিক স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯২ সালে ঢাকার মোহাম্মদপুরের মেয়ে শামীম আরা ইয়াসমিনকে প্রথম বিয়ে করেন। ২০০৯ সালে ঢাকার ধানমন্ডির তাপসী পায়েল গীতা কে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বিয়ে করেন মিরপুরের মমতা নাসরিন কে। এরপর একে একে ১৪টি বিয়ে করেছেন তিনি। সোনিয়া নামে আরেক স্ত্রীর করা মামলায় জেল খাটলেও শোধরায়নি বিয়ে পাগল বন কর্মকর্তা।

এসব বিষয়ে অভিযুক্ত কবির হোসেন পাটোয়ারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি তার আইনজীবীর মাধ্যমে বক্তব্য দেন। তার নিয়োগকৃত আইনজীবী এনায়েত হোসেন বাচ্চু বলেন, বিষয়টি ব্যক্তিগত। যা বলার তা তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে বলা হয়েছে। তাছাড়া তদন্ত চলাকালীন এ বিষয়ে কোন ধরণের মন্তব্য করতে চাইনা। তদন্তকারী কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব সাইদুর রহমান সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজী হননি।

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED