Loading Now

আজ মহালয়া:দেবীপক্ষের শুরু

 

কমল সেনগুপ্ত ॥

শিউলি ফুলের সাথে শরতের নিবিড় সখ্যতা। ফুলে ফুলে ভরে গেছে শিউলি তলা! চোখ কচলাতে কচলাতে যখন শিউলি তলায় গেলাম। দেখালাম শিউলি আর শিউলি, গালিচার মতো বিছিয়ে আছে শিশির-ভেজা কমলা-সাদা মহিমা। গাছ থেকে তখনও ঝরে পড়ছে টুপ টাপ শব্দে। সূর্যোদয়ের আগেই আকাশে-বাতাসে ধবনিত হচ্ছে বিরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের সুর, আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক-মঞ্জীর, ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা,

প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা।

আনন্দময়ী মহামায়ার পদধ্বনি অসীম ছন্দে বেজে রূপলোক উঠে ও রসলোকে আনে নব ভাব মাধুরীর সঞ্জীবন। তাই আনন্দিতা শ্যামলীমাতৃকার চিন্ময়ীকে মৃণ্ময়ীতে আবাহন। আজ চিৎ-শক্তিরূপিনী বিশ্বজননীর শারদশ্রী বিমণ্ডিতা প্রতিমা মন্দিরে মন্দিরে ধ্যানবোধিতা। আজ মহালয়া। মহালয়ার মাধ্যমে পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে শুরু হয়েছে দেবীপক্ষের।

মহালয়া মানেই অপেক্ষার শেষ। দোর গোড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এবারে বরিশাল মহানগরীতে ৪৭টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সার্বজনীন ৪০ টি আর ব্যাক্তিগত ৭ টি দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

হিন্দু শাস্ত্রমতে, শরৎকালে সব দেব-দেবীর মতো দেবীদুর্গাও নিদ্রিত থাকেন। ষষ্ঠীর দিন পুজোর শুরুতেই হয় বোধন। বাঙালির কাছে দুর্গার বোধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসলে এর সঙ্গে মিশে রয়েছে অনেক রীতি আর বিশ্বাস। ‘বোধন’ কথার মানেই হচ্ছে জাগরণ। দেবীর নিদ্রাভঙ্গের চেষ্টা। বাংলায় দেবীর বোধনের সঙ্গে রামায়ণের যোগ আছে। বলা হয়, রাবণের বিনাশের জন্য রামচন্দ্র দেবীর আরাধনা করেছিলেন শরৎকালে। সেটা নিয়ম অনুযায়ী ‘অকাল’। তাই এই বোধন পূজাকে ‘অকাল বোধন’ বলা হয়। পুরাণ অনুযায়ী বসন্তকাল হচ্ছে দেবী দুর্গা পূজার প্রকৃত সময়। কিন্তু রাবণকে বধ করার জন্য রামচন্দ্র, দেবীকে অকালে আবাহন করেন তাঁর আশীর্বাদ লাভের জন্য। শারদীয় পূজায় ষষ্ঠীতে বোধন-মন্ত্রে সে উল্লেখও রয়েছে। এবারে ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়া বা সর্বপিতৃ অমাবস্যা দিয়ে অবসান হবে পিতৃপক্ষের। ২২ সেপ্টেম্বর আশ্বিন শুক্লা প্রতিপদ তিথি থেকে শুরু হবে দেবীপক্ষ। ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীতে দেবীর অকাল বোধন করে শুরু হবে শারদীয়া দুর্গাপুজো ২০২৫। ২ অক্টোবর বিজয়া দশমী পর্যন্ত চলবে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব দুর্গাপুজো। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে দুর্গাপুজোর এই ক’দিন দেবী দুর্গা মর্ত্যে অবস্থান করেন এবং ভক্তরা তাঁর আরাধনা করেন। দুর্গাপুজোর দিনগুলোয় নানা বিধি-আচার পালন করার রীতি আছে। মন্ডপে মণ্ডপে হিন্দুরা অঞ্জলি দিয়ে প্রার্থনা করবে, ‘সিংহারূঢ়া শশিশেখরা, মরকতমণির তুল্য প্রভাময়ী, চারিহস্তে শঙ্খ, চক্র ও ধনুর্বাণ ধারিণী, ত্রিনয়ন দ্বারা শোভিতা, কেয়ূর, হার ও বলয় এবং মৃদু-মধুর ধ্বনিযুক্তা চন্দ্রহার ও নূপুর পরিহিতা এবং রত্নে উজ্জ্বল কুণ্ডল ভূষিতা দুর্গা আমাদের দুর্গতি নাশ করুন’।

রেডিওতে শুনতে পেলাম ‘শান্তি দিলে ভরি। দুখরজনী গেল তিমির হরি। প্রেমমধুর গীতি বাজুক হৃদে নিতি। প্রাণে সুধা ঢালো মরি গো মরি। শান্তি দিলে ভরি’। শঙ্খধ্বনি হচ্ছে। মহালয়া শেষ হল। শঙ্খে শঙ্খে মঙ্গল গাও জননী এসেছে দ্বারে।

দেবী দুর্গা যেহেতু অসুরদের দলপতি মহিষাসুরকে বধ করে দেবকুলকে রক্ষা করেছিলেন। তিনি মর্ত্যে এসে অশুভ শক্তির বিনাশ করে শুভ শক্তিকে প্রতিষ্ঠা করেন বলে মনে করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। জীবের দুর্গতি নাশ করেন বলে তিনি দুর্গতিনাশিনী।

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED