কৃষককে পিটিয়ে হত্যার পর ‘ডাকাত’ বলে মসজিদের মাইকে প্রচার!
বাকেরগঞ্জ প্রতিনিধি ।।
বরিশালের বাকেরগঞ্জে ডাকাত অপবাদে এক কৃষককে পিটিয়ে হত্যা করেছে প্রতিবেশী প্রতিপক্ষরা। স্থানীয় কবাই ইউনিয়নের উত্তর কবাই গ্রামের বাসিন্দা ত্রিশোর্ধ্ব সোহেল খান নামের এই যুবককে শনিবার গভীর রাতে বাসা থেকে ডেকে নেন শাহিন হাওলাদার। এবং বাড়ির পার্শ্ববর্তী মসজিদের সামনে হাত-পা বেঁধে তাকে ব্যাপক নির্যাতন করেন। এতে মৃত্যু হলে সোহেল ডাকাতি করতে এসেছেন বলে স্থানীয় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো করা হয়।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কবাই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর কবাই গ্রামের নূর ইসলাম হাওলাদারের ছেলে পেশায় কৃষক সোহেল খানের সাথে একই গ্রামের শাহিন হাওলাদারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। সেই বিরোধীয় জেরে সোহেলকে শায়েস্তা করতে শনিবার রাতে বাসা থেকে লোক মারফত ডেকে নেন শাহিন। এরপর রাত ১২টার দিকে বাড়ির পার্শ্ববর্তী মসজিদের সামনে নিয়ে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করেন। এবং বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে ডাকাত পড়েছে বলে লোক সমাবেত করেন।
নিহতের স্ত্রী সাজেদা বেগম জানান, তরমুজ চাষের জন্য গত বছর তাদের জমি লিজ নেন উত্তর কবাই গ্রামের মন্নান হাওলাদারের ছেলে শাহিন হাওলাদার। এ বছর ওই জমি লিজ না দিয়ে তার স্বামী নিজে চাষাবাদ করেন। এ ঘটনায় শাহীন কিছুদিন আগে ১৫০ থেকে ২০০ মহিষ এনে তাদের জমিতে ছেড়ে দিয়ে ফসল বিনষ্ট করেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বিরোধ চলছিল। তার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে এখন ডাকাত সাজানোর চেষ্টা চলছে, অভিযোগ করেন সাজেদা বেগম।
বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ জানায়, রোববার ভোর ৪টার দিকে জাতীয় জরুরিসেবা নম্বর ৯৯৯ থেকে একটি কল আসে চরকবাই গ্রামে একজন ডাকাতকে আটকে রাখা হয়েছে। সংবাদ পেয়ে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে সোহেলের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করেন। এবং পরবর্তীতে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বরিশালে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, নিহত সোহেলের স্ত্রী তার স্বামী পরিকল্পনামাফিক খুনের অভিযোগ করেছেন। এবং যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন তারা সোহেলকে ডাকাত হিসেবে আখ্যায়িত করতে চাইছেন। বিষয়টি নিশ্চিত হতে তদন্ত করা হচ্ছে এবং সোহেলের পরিবারকে থানায় অভিযোগ করতে বলা হয়েছে।
শত্রুতা উদ্ধারে পড়শীকে ডাকাত আখ্যা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা আইনসিক্ত কী না এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, এই ধরনের কিছু হলে কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। অবশ্যই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে, মন্তব্য করেন ওসি।’
Post Comment