বৃষ্টির অজুহাতে বেড়েছে কাঁচা মরিচের ঝাঁজ, মাছ-মাংসের বাজার আকাশছোঁয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
আবারও বৃষ্টিকে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সরবরাহ সংকটের অজুহাতে বাড়িয়েছে কাঁচা মরিচসহ সব ধরনের সবজির দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে কিছু সবজি কেজিপ্রতি ১০-২০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করছে। কিন্তু খুচরা বাজারে সবজির কোনো সংকট নেই। পাশাপাশি খুচরা পর্যায়ে সাত দিনের ব্যবধানে ভোজ্যতেল ও মসুর ডালের দামও বাড়ানো হয়েছে। অসহনীয় মাছ-মাংসের দামও। ফলে এসব পণ্য কিনতে এসে ক্রেতাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। শুক্রবার বরিশালের একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হয়েছে ৮০- ৯০ টাকা, যা সাত দিন আগেও ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়শ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা। প্রতি কেজি ঝিঙা বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকা। প্রতি পিস লাউ বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকা। পাশাপাশি খুচরা বাজারে প্রতি কেজি সিম ২০০ টাকা, উস্তা ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০-১০০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া প্রতি কেজি কচুরমুখী ৫০/৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, কুমড়া ৪০-৫০ টাকা, শসার কেজি ৬০-৭০ টাকা, গাজর ১২০/ ১৪০ টাকা, পটোল ৬০/৮০ টাকা, মুলা ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০/২৫ টাকায়। বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা। কাঁচামরিচের দাম গত সাপ্তাহের মতোই ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। তবে এখনো ঊর্ধ্বগতি রয়েছে মাছ-মাংসের দাম।
নতুল্লাবাত বাসস্ট্যান্ডে সবজি কিনতে আসা মো. রফিক বলেন, বৃষ্টি হলেই বিক্রেতারা সবজির দাম বাড়িয়ে দেয়। এটা স্বাভাবিক যে বৃষ্টির কারণে সবজি নষ্ট হয়। পরিবহণেও ঝামেলা হয়। এতে সরবরাহ কমে। তবে বাজারে সরবরাহ পর্যাপ্ত। কিন্তু বিক্রেতারা বৃষ্টির অজুহাতে সরবরাহ কম বলে বাড়তি দামে বিক্রি করছে। যা কোনোভাবেই ঠিক নয়।
তিনি আরও বলেন এখন রাস্তা চাঁদা দিতে হয় না। তারপর ও সবজি সহ নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখি। ৫ আগস্টের পরে ২/১ মাস নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও আগের চেয়েও খারার অবস্থা এখন। বাজারে কোন পণ্যের গায়েনহাত দেয়া যায় না। শুধু শুনি বাজারদর নিয়ন্ত্রণে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু বাস্তবে ব্যবসায়ীদের খামখেয়ালি পনায় অসহায় সাধারণ ক্রেতা।
একই বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. আল আমিন বলেন, আড়তে সবজির সরবরাহ কমেছে। আড়ত পর্যায়ে দাম বাড়ায় আমাদের বাড়তি দরে কিনতে হয়েছে। বিক্রিও করতে হচ্ছে বাড়তি দামেই। বৃষ্টি এমন চলতে থাকলে দাম আরও কিছুটা বাড়তে পারে।
এদিকে বরিশালের খুচরা বাজারে ভোজ্যতেল ও ডালের দাম বাড়ানো হয়েছে। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এদিন দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ব্র্যান্ড ভেদে ৩৮০-৩৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা সাত দিন আগেও ৩৭৫-৩৮০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে পাম তেলের দামও। লিটারপ্রতি পাম তেল সুপার বিক্রি হচ্ছে ১৬৮/১৭০ টাকা। যা আগে ১৬৫/১৬৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সঙ্গে মাঝারি দানার প্রতি কেজি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা। যা সাত দিন আগে সর্বনিম্ন ১১০/১২০ টাকায় পাওয়া গেছে।
এছাড়া ছোট দানার প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম গিয়ে ঠেকেছে ১৫০-১৬০ টাকা। সেক্ষেত্রে মাসের ব্যবধানে এই পণ্যের দাম সর্বোচ্চ কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। আর বড় দানার মসুর ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা।
বাংলা বাজারে মুদি পণ্য কিনতে আসা নাজমুল হাসান বলেন, মিডিয়ায় দেখেছি তেল কোম্পানিগুলো তেলের দাম বাড়াতে সরকারের কাছে আবেদন করেছে। কিন্তু সরকার দাম বাড়ায়নি। তারপরও দোকানে এসে দেখি বিক্রেতারা তেলের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। সঙ্গে ডালের দামও বাড়ছে হু হু করে। দেখার যেন কেউ নেই।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা। সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকা। আর খাসির মাংসে কেজিপ্রতি ১১০০ থেকে সর্বোচ্চ ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে আকার ভেদে ১৪০/১৫০ টাকা।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মাঝারি আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৩০০-২৫০০ টাকা। ৭০০-৮০০ গ্রামের ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০০-১৮০০ টাকা। আর ছোট আকারের ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৭৫০ টাকা। পাশাপাশি প্রতি কেজি রুই ৩৫০-৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০/৩০৯ টাকা, পাঙাশ ২২০-২৫০ টাকা, পাবদা ৪৫০-৫৫০ টাকা, টেংরা ৮০০ টাকা ও চিংড়ি আকার ভেদে কেজিপ্রতি ১০০০/১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
Post Comment