মাথা গোজার ঠাই পেল অদম্য নারী সালমা
দরিদ্র সাধারণ পরিবারের ৭ ভাই বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন সালমা বেগম। ২০০৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে আপন চাচাতো ভাই কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হন সালমা। ২০০৪ সালের ৯ জুন তারিখে সালমা জন্ম দেন একটি পুত্র সন্তান।
ট্রলি চালক বাবা ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কিন্তু ভিকটিম হওয়া সত্ত্বেও প্রভাবশালী শক্তি ও সমাজের চাপে গ্রামছাড়া হতে হয় সালমার পরিবারকে। মামলা চলাকালীন ২০০৬ সালে স্ট্রোক করে বাবা বিছানায় পড়ে গেলে সংসার চালাতে আড়াই বছরের পুত্র সন্তানকে মায়ের কাছে রেখে ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি নেন সালমা। কষ্টার্জিত আয়ের অধিকাংশ টাকা ছেলে ও পরিবারের জন্য পাঠিয়ে দেন।
দীর্ঘ আট বছর পর ২০১১ সালে সালমার পক্ষে আদালতের রায় হয়। আসামি মোঃ গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ার তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি আসামির ঔরসজাত এবং ভিকটিম এর গর্ভজাত শিশুপুত্রের ভরণপোষণের ব্যয় ২১ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্র কর্তৃক বহন করার আদেশ দেওয়া হয়।
কিন্তু ততদিনে সালমা জীবন সংগ্রামে ক্লান্ত, অসহায়, আশ্রয়হীন এক নারী। বাবার মৃত্যুর পর থেকে ভাইয়ের পরিবারের আশ্রিত হয়ে বসবাস করায় সরকার প্রদত্ত সে অর্থের প্রায় পুরোটাই তার ভাইয়েরা আত্মসাৎ করেন।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রাপ্ত শেষ কিস্তির ১,৮২,০০০ টাকা প্রদানের সময় বিষয়টি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন এর নজরে আসে। তিনি বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে উপলব্ধি করেন, শেষ কিস্তির অর্থ আত্মসাৎ হলেই সালমা পুনরায় আশ্রয়হীন হয়ে পড়বে।
সালমা এবং তার সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তর, বিভিন্ন এনজিও এর সার্বিক সহযোগিতায় বাবুগঞ্জের রহমতপুরে জাতীয় মহাসড়কের পাশে এক টুকরো জমি কিনে একটি আধা-পাকা ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়।
পরবরৃতীতে ২৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকালে সালমার হাতে তার ঘরের চাবি তুলে দেন জেলা প্রশাসক বরিশাল মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। এসময় তিনি ফিতা কেটে সালমার ঘরের উদ্বোধন করেন। পাশাপাশি তার ছেলের ভরণপোষণের শেষ কিস্তির ১,৮২,২৮১ টাকার চেক তুলে দেয়া হয় তার হাতে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাবুগঞ্জ ফারুক আহমেদ, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়, বরিশাল এর উপপরিচালক এ কে এম আক্তারুজ্জামান তালুকদার, সহকারী পরিচালক জেলা সমাজসেবা কার্যালয় সাজ্জাদ পারভেজ, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ।
মাথা গোঁজার নিরাপদ ঠাঁই সালমা দু’চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। সালমার সন্তান বর্তমানে স্থানীয় একটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করছে। সন্তানকে নিশ্চিন্তে মানুষ করার দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে সালমা জেলা প্রশাসক সহ সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।


Post Comment