নিষেধাজ্ঞা শেষ;ইলিশ আহরন শুরু
ইলিশ সম্পদ উন্নয়নে নিরাপদ প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে ২২ দিনের আহরণ নিষেধাজ্ঞা গত মধ্যরাতে উঠে যাওয়ার পরে জেলেরা নৌকা ও ট্রলার নিয়ে ছুটতে শুরু করেছেন।
৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে যে নিস্তব্ধতা নেমে এসেছিল তা কাটিয়ে কয়েকদিন ধরেই জেলে পল্লীগুলো আবার সরব হয়ে উঠেছে। বরিশাল সহ সমগ্র উপকূলের মাছের মোকামগুলোও আবার কর্মচাঞ্চল্য এসেছে। সারা দেশের ৭০ ভাগ ইলিশই বরিশাল সহ সন্নিহিত উপকূলভাগে আহরিত হয়ে থাকে। গত ৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে বরিশাল উপকূলের ৭ হাজার ৩৪৩ বর্গ কিলোমিটারে সব ধরনের মৎস্য আহরণ সহ সারা দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও বিপণনে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছিল।
তবে এবার আহরণ নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে একশ্রেণীর জেলে ও মৎস্যজীবীরা সরকারি বিধিবিধান অমান্য করে মাছ ধরায় যথেষ্ট বেপরোয়া ছিল। এ কারণে মৎস্য আহরণ বন্ধে বরিশালে গুলিবর্ষণ পর্যন্ত করতে হয়েছে । জেলেদের হামলায় মৎস্য অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্যও আহত হয়েছেন। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে পুলিশ, নৌ পুলিশ, র্যাব, কোষ্টগার্ড এবং বাংলাদেশ নৌ বাহিনী অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় নদ-নদী ও সাগর মোহনায় ব্যাপক নজরদারী চালায়।
টানা ২২ দিন নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে ইলিশ আহরণে বিরত বিশাল জেলে সম্প্রদায়ের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকার ৬ লাখ ২০ হাজার ১৪০টি জেলে পরিবারের মধ্যে ২৫ কেজি করে ১৫ হাজার টন চাল বিতরণ করেছে। যারমধ্যে শুধু বরিশাল উপকূলের ৩.৪০ লাখ জেলে পরিবারের জন্যই সাড়ে ৮ হাজার টন চাল বরাদ্দ রাখা হয়।
তবে এ নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিপুল সংখ্যক মাছধরা ট্রলার বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের নৌ-সীমা অতিক্রম করে বাগেরহাট-বরগুনার বলেশ^র নদীর ভাটির সাগর এলাকায় পৌছে যায়। যাদের একটি অংশ নৌ বাহিনীর হাতে ধরাও পড়েছে।
ইলিশ আহরণ বন্ধে এবারো বিভাগ থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে টাস্কফোর্স গঠন করে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। ২২ দিনের এ আহরণ ও বিপণন নিষিদ্ধকালীন সময়ে উপকূল ও অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে প্রায় ১০ হাজার অভিযান পরিচালনা ছাড়াও ২ হাজার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে প্রায় ২ হাজার জেলে ও মৎস্যজীবীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। এ সময়ে প্রায় ১ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। অভিযানকালে প্রায় ৭ কোটি মিটার অবৈধ জাল আটক করে বাজেয়াপ্ত করা হয়। এসময়ে প্রায় দেড়শ টন ইলিশ আটক করে বিভিন্ন এতিমখানা ও লিল্লøাহ বোর্ডিং-এ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। প্রায় দেড় হাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, ১০ হাজার মাছঘাট এবং প্রায় ৪০ হাজার আড়ত ও বাজার পরিদর্শন করেছেন মৎস্য অধিদপ্তর ও প্রশাসনের পরিদর্শন দল। পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে ইলিশ মোকাম ছাড়াও মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, বাজার এবং আঞ্চলিক ও জাতীয় মহাসড়কেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারী অব্যাহত ছিল।



Post Comment