Loading Now

এখনি বহিস্কৃত নেতাদের ফেরানোর পক্ষে নয় বরিশাল বিএনপি!

একসময় দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে দল কর্তৃক খেতাব পেয়েছিলেন মীরজাফর,কাউকে দেয়া হয়েছিল জাতীয় বেইমান উপাধি।এবং করা হয়েছিল বহিস্কার।ফলে ঐ সকল নেতারা বিগত স্বৈরাচার সরকারের সাথে আতাত করে সবরকম সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন। আবার পাঁচ আগস্টের পর নানা অপকর্মে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের দায়ে বহিষ্কৃত ও পদস্থগিত করা হয়েছে শতাধিক নেতাকে। এসকল বদনাম মাথায় নেয়া নেতাদের এখনই দলে ফেরানোর পক্ষে নয় বরিশাল অঞ্চলের তৃণমূল বিএনপি। তাদের ফেরালে ভোটের মাঠে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে এবং মিডিয়ায় নানাবিধ স্কান্ডাল হবে বলে মনে করছেন দলটির জেলা পর্যায়ের নেতারা। অবশ্য অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের শিকার কিংবা সংগঠনিক বিশৃঙ্খলার দায়ে যারা শাস্তি পেয়েছেন, তাদের ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন তারা।

ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার পলায়নের পর বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বিএনপির একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী নেতাকর্মীরা। দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে যার যার এলাকায় হামলা, ভাঙচুর, দখল, চাঁদাবাজিতে মেতে ওঠেন তারা। বিএনপিও তাৎক্ষণিক কঠোর ব্যবস্থা নিতে শুরু করে তাদের বিরুদ্ধে। কারও ব্যক্তিগত অপকর্মের দায় না নিয়ে সারা দেশে বহিষ্কার ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয় ৭ হাজারের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। বিএনপির ইতিবাচক এই পদক্ষেপের বাইরে ছিল না বরিশাল। বিভাগের ৬ জেলা আর ৪৪ উপজেলায় সাংগঠনিক শাস্তির শিকার হন ১৪০ জনের বেশি নেতাকর্মী। যাদের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় পদধারী থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলার পদধারী অনেক শীর্ষ নেতা। অপকর্মের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ ও দলের অভ্যন্তরীণ তদন্তে প্রমাণ পাওয়ার পর দলীয় পদ-পদবি স্থগিত থেকে শুরু করে প্রাথমিক সদস্য পদ পর্যন্ত বাতিল করা হয় তাদের। পরে অবশ্য ২-১ জনকে আবার ফেরানো হয় দলে।

মাঠপর্যায়ে পরিচালিত তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ না মেলায় দলে ফিরিয়ে সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনের বিএনপি নেতা রুহুল আমিন দুলালকে। এই ঘটনায় প্রশংসাও পেয়েছে বিএনপি। কিন্তু সমস্যা বেঁধেছে এমন কিছু বহিষ্কৃতদের নিয়ে যাদেরকে ফেরালে ভোটের মাঠে জটিলতায় পড়তে পারে দল। গণহারে এদেরকে ফেরানো হলে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা জেলা পর্যায়ের নেতাদের। গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বহিষ্কৃত উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতাকর্মীকে দলে ফেরানোর কারণেই এখন এই শঙ্কা তাদের।

৫ আগস্টের পর বেপরোয়া দখল চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের কারণে বরিশালে সাংগঠনিক শাস্তির শিকার হন বিএনপির ৩৪ নেতাকর্মী। গৌরনদী পৌর বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকসহ এই তালিকায় আছেন বরিশাল মহানগর বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায়ের দুই আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব। এছাড়া বাকিরা মূল দলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা।

বরিশাল মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ বলেন,বহিষ্কার কেন করা হয়েছিল? কেন তাদের বেইমান আ্যখা দেয়া হয়েছে এটা মনে রাখতে হবে,যারা বহিস্কৃত হয়ে অন্য কোন দলের কিংবা ফ্যাসিস্ট দলের নেতাদের সাথে আতাত করে নাই তাদের পদ ফেরতের জন্য কোন কষ্ট পাবো না।তবে যারা আওয়ামী লীগের নেতাদের বেডরুমের লোক হয়ে বিগত বছরগুলোতে কাজ করেছে তাদের সদস্যপদ ফেরত দিলে এটা সাধারন কর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরন হবে।

বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক দেওয়ান মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, আমরা এখন সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছি ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাইতে। দল যে সিদ্ধান্ত দেবে তা মাথা পেতে নেব। তবে কাকে ফেরানো উচিত আর কাকে নয় সে ব্যাপারে মাঠপর্যায়ে তদন্ত আর আমাদের মতামত নিক কেন্দ্র। এটাই অনুরোধ। এমন কাউকে ফেরানো উচিত হবে না যার কারণে সাধারণ মানুষের প্রশ্নের সামনে পড়তে হবে।

বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহিন বলেন, সাংগঠনিক শাস্তি প্রত্যাহারের আগে দল অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে নেবে বলে আমার বিশ্বাস। কেন্দ্র এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না যাতে দলের ক্ষতি হয়।

বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, যেখানে মাত্র ক’দিন পরেই ভোট, সেখানে বহিষ্কৃত কিংবা শাস্তির শিকারদের গণহারে না ফেরানোই উচিত বলে মনে করি।

পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি স্নেহাংশু সরকার কুট্টি বলেন, অপরাধীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ায় বিএনপির প্রতি আস্থা বেড়েছে মানুষের। আওয়ামী লীগের ভোটাররা পর্যন্ত এখন নিরাপদ ভাবছে আমাদের। এমন পরিস্থিতিতে গণহারে শাস্তি প্রত্যাহার হলে ভুল বার্তা যাবে ভোটারদের কাছে। আমি মনে করি দল ভেবেচিন্তেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।

বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে বরিশাল-৫ (সদর) আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, এমন অনেক বহিষ্কৃত আছে যাদের ফেরানো হলে শুধু ভোঠের মাঠে বিরূপ প্রতিক্রিয়া নয়, দলের অভ্যন্তরেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমানে ঐক্যবদ্ধ বরিশাল বিএনপি। সবাই মিলে একযোগে কাজ করছে ধানের শীষের পক্ষে। চলমান পরিস্থিতিতে এমন কারও শাস্তি প্রত্যাহার করা উচিত হবে না যাদের কারণে ধানের শীষের বিজয়ের মসৃণ পথটা এবড়ো-খেবড়ো হয়ে যাবে। আপাতত আমাদের কাছে জরুরি হচ্ছে আসন্ন নির্বাচন। সেই নির্বাচনে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া কিংবা দলের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে এমন কাউকে ফেরানো ঠিক হবে না বলে আমি মনে করি।

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED