বিদায়ী প্রশাসকের অনিয়মের মচ্ছব!
নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
বিদায়বেলায় নানা সেক্টরে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সদ্য সাবেক বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) প্রশাসক রায়হান কাওছারের বিরুদ্ধে। ভুয়া একটি সভা দেখিয়ে ১৬টি হাইরাইজ ভবনের প্ল্যান অনুমোদন দিয়েছেন তিনি। মেয়াদ শেষ হলেও কয়েকজনের চুক্তি বাড়িয়ে গেছেন প্রশাসক। হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে সিটি করপোরেশনের রিসোর্টের জন্য কুয়াকাটায় জমি কিনেছেন তিনি। ১৫৯ জনকে ছাঁটাই করেও তাঁদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেননি।
সদ্য সাবেক প্রশাসক রায়হান কাওছারের বিরুদ্ধে তিন দিন ধরে বিক্ষোভ চলছে বিসিসি কার্যালয় এলাকায়। নগর ভবনে না ঢুকতে পেরে গত মঙ্গলবার বরিশাল ছেড়েছেন বিদায়ী এই প্রশাসক। সূত্র জানিয়েছে, ১২ নভেম্বর থেকে তিনি কার্যালয়ে যাননি। এর মধ্যে ১৬ নভেম্বর বরিশাল নগর ভবনে একটি ভুয়া সভা দেখিয়ে উপস্থাপন করা ৪৬টি ভবনের প্ল্যানের মধ্যে ১৬টি সুউচ্চ ভবনের (৭ তলা থেকে ১০ তলা) প্ল্যান অনুমোদন দিয়েছেন তিনি। করপোরেশনের ওয়েবসাইটে অনুমোদনের আদেশ পরদিন প্রকাশ করা হয়।
করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর প্রশ্ন, প্রশাসক কার্যালয়ে না ঢুকে কীভাবে এতগুলো ভবনের নকশা অনুমোদন দিলেন। এ প্রসঙ্গে বিসিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব রুম্পা সিকদার বলেন, হাইরাইজ বিল্ডিংয়ের অনুমোদন প্রশাসক দেন। স্থপতি এ বিষয়ে বলতে পারবেন।
জানতে চাইলে বিসিসির স্থপতি সাইদুল ইসলাম বলেন, রেজল্যুশনে হয়তো ভুল হয়েছে। সভা করেছেন অডিটরিয়ামে। উৎকোচের মাধ্যমে এসব প্ল্যান অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেউ পারলে প্রমাণ দেখাক।
এ প্রসঙ্গে সদ্য বিদায়ী প্রশাসক রায়হান কাওছার বলেন, গত পরশু তিনি ১৬টি প্ল্যানের অনুমোদন দিয়েছেন। তবে ১৬ নভেম্বর নগর ভবনে না যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি কোনো কথা বলেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল সিটি করপোরেশন কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আনিচুর রহমান বলেন, সাবেক প্রশাসক ১২ নভেম্বরের পর আর নগর ভবনে ঢোকেননি। ১৬ নভেম্বর নগর ভবনে যে সভা দেখিয়েছেন, তা ভুয়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নকশা অনুমোদন পাওয়া নগরীর একজন বাসিন্দা বলেন, ভবনের প্ল্যান করতে গিয়ে তাঁর পায়ের জুতা কয়েকটি ছিঁড়তে হয়েছে। এক বছর ধরে তিনি ঘুরছেন। সব শেষে করপোরেশনের স্টাফদের মাধ্যমে প্রশাসককে ম্যানেজ করতে হয়েছে। প্রশাসক বদলি না হলে তাঁদের প্ল্যান পাস হতো না।
নিয়োগে অনিয়ম: সম্প্রতি বিসিসির অস্থায়ী ১৫৯ কর্মচারীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। তবে তাঁদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে ১২১ জন কর্মী বিক্ষোভ করছেন বিসিসি এলাকায়।
বিসিসি সূত্রে আরও জানা গেছে, অস্থায়ী কর্মচারী সত্ত্বেও নিয়োগবিধি লঙ্ঘন করে নুরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে চিফ অ্যাসেসর করে গেছেন সদ্য সাবেক প্রশাসক রায়হান কাওছার। বেশ কয়েকজনকে পদায়নও করেছেন গায়ের জোরে। অবসরে যাওয়ার আগে চুক্তি বাড়ানোর নিয়ম না থাকলেও কয়েকজনের ১ বছর বৃদ্ধি করেছেন। নতুন করে ৮ জনকে নিয়োগ দিয়ে গেছেন।
এ প্রসঙ্গে সিটি করপোরেশন কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আনিচুর রহমান বলেন, টাকার বিনিময়ে তিনি অনেককে আইনবহির্ভূত নিয়োগ ও পদোন্নতি দিয়েছেন। ১৫৯ জনকে ছাঁটাই করেও তাঁদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেননি। বিশেষ করে ১২১ জনকে স্থায়ীকরণে নানা টালবাহানা করেছেন।
গতকাল কর্মচারীদের বিক্ষোভে এ নিয়ে কথা বলেন উপসহকারী প্রকৌশলী আরাফাত মনির। তিনি বলেন, সাবেক প্রশাসক রায়হান কাওছার তাঁদের ১২ জনের চাকরি স্থায়ীকরণের নামে হয়রানি করেছেন। বরং অনেককে উৎকোচ গ্রহণ করে নিয়োগ ও পদোন্নতি দিয়েছেন।
জমি কেনায় অনিয়ম: এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে সিটি করপোরেশনের রিসোর্টের জন্য কুয়াকাটায় ৭ একর জায়গা কিনেছেন সদ্য সাবেক প্রশাসক। ১৭ কোটি টাকায় কেনা হয়েছে এই জমি। জমি কিনতে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে প্রশাসকের বিরুদ্ধে। কুয়াকাটায় রিসোর্ট করার নামে জমি কেনা নিয়ে এখন ক্ষুব্ধ করপোরেশনের কর্মচারীরাও।
তবে রিসোর্টের জন্য জমি কেনার ওপর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা জারির কিছু জানেন না দাবি করে রায়হান কাওছার বলেন, তিনি কম দামে জমি কিনেছেন।
তবে সিটি করপোরেশন কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আনিচুর রহমান বলেন, প্রতি কাঠা জমিতে প্রশাসক ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন।
এ নিয়ে গতকাল কথা বলেন উপসহকারী প্রকৌশলী আরাফাত মনির। তিনি বলেন, এ অবৈধ কর্মকাণ্ড হাইকোর্ট স্থগিত করেছেন। এরপরও প্রশাসক কীভাবে রিসোর্ট করার জন্য জমি কেনেন?



Post Comment