Loading Now

বাংলাদেশে বড় বিপর্যয়ের ‘পূর্বাভাস’, ঘন ঘন ভূমিকম্পে চরম ঝুঁকিতে ঢাকা

অনলাইন ডেক্স ।।

গত কয়েক বছর ধরে দেশে ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, ঘন ঘন হালকা ভূকম্পন মূলত একটি ‘বড় শক্তির ভূমিকম্পের প্রাথমিক ধাপ’ এবং বাংলাদেশ বর্তমানে প্রায় ১৫০ বছরের যে ভূকম্পন চক্রের মধ্যে আছে, তাতে যেকোনো মুহূর্তে রিখটার স্কেলে ৮ দশমিক ২ মাত্রার মতো প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প হতে পারে।

দেড় বছরে ২১টি কম্পন: আতঙ্কের নতুন মাত্রা

তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১৫ মাসের ব্যবধানে দেশে ছোট ও মাঝারি মাত্রার প্রায় ২১টি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে হওয়া ১২টি ভূমিকম্পের মধ্যে ৩টির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫-এর ওপরে। সর্বশেষ আজ শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে ৫.৫ মাত্রার এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীতে।

এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে অনুভূত হওয়া ভূকম্পনগুলোর মধ্যে একটি ছিল ২০২৩ সালের ৫ মে ভোরে, যার উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার খুব কাছের উপজেলা দোহারে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪.৩ (সময়: সকাল ৫টা ৫৭ মিনিট)। এর আগে, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে (ঢাকা থেকে ৮৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে) উৎপত্তিস্থল হওয়া অন্য একটি ভূমিকম্পের কারণে কিছু কিছু স্থানে বড় বড় ভবনে ও ঘরের ছাদে ফাটল ধরেছে, মেঝের টাইলসে ফাটল ধরেছে এবং কোথাও ভবন থেকে দ্রুত নিচে নামতে গিয়ে শতাধিক পোশাকশ্রমিকের আহত হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।

ফল্টলাইন ও টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষ

ভূতত্ত্ববিদদের মতে, বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে একটি অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায়, যেখানে দুটি সক্রিয় টেকটনিক প্লেট—ভারতীয় প্লেট ও মিয়ানমার (বার্মা) টেকটনিক প্লেট—পরস্পরকে স্পর্শ করে আছে।

এই দুটি প্লেটে সংঘর্ষের কারণেই এত ভূমিকম্প হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সুব্রত কুমার সাহা জানান, দেশে দুই ধরনের ভূমিকম্প হচ্ছে:

১. টেকটোনিক প্লেটের কারণে ভূমিকম্প: এর মূল কেন্দ্র সাধারণত দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল (সিলেট) বা আসাম-শিলং প্লেটের কাছাকাছি থাকে, যার প্রভাব ঢাকাতেও পড়ে।

২. ফল্ট লাইনের কারণে ভূমিকম্প: এটি প্লেট বাউন্ডারি ছাড়া ফল্ট লাইনে হয়। মধুপুর ফল্টলাইন অন্যতম। এ ছাড়া ২০০১ সাল থেকে বুড়িগঙ্গা, পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্রের আশপাশেও উৎপত্তিস্থল দেখা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ২০০১ সালে বুড়িগঙ্গার কাছে, ২০০৮ সালে মানিকগঞ্জে এবং পরে চাঁদপুর ও ময়মনসিংহে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল। পদ্মা বা মেঘনার আশপাশে ফল্ট লাইন আছে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার সতর্ক করে বলেন, এই অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের শক্তি বহু বছর ধরে সঞ্চিত হয়ে আছে। ইন্ডিয়া ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে প্রায় ৮০০ থেকে ১০০০ বছর আগে ভূমিকম্প হয়েছিল। এই শক্তি একসঙ্গে মুক্ত হলে ৮.২ মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা সৃষ্টি হবে।

রাজধানীঢাকা: ধ্বংস ও আর্থিক ক্ষতির চরম ঝুঁকিতে

বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত এক গবেষণায় দেশের ঝুঁকির ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে:

বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন ও ভূমির দুর্বলতা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা শহরের বহু ভবনের নির্মাণ দুর্বলতা এই ক্ষতির আশঙ্কা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। নগর-পরিকল্পনাবিদ আকতার মাহমুদ জানান, ঢাকা শহরে অনেক বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে ইমারত নীতিমালা ও ভূমির ধরন না মেনে।

ঝুঁকির প্রধান কারণ: যেসব ভবন বালু ও নরম মাটিতে (বিশেষত জলাভূমি ভরাট করে) নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলোর ঝুঁকি অনেক বেশি। তবে যেসব ভবন লাল মাটি বা শক্ত মাটির ওপর নির্মিত, সেগুলোর ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম।

ভূমিকম্প হবে ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নিতে এবং জাতীয় ভবন নির্মাণ নীতিমালা কঠোরভাবে মেনে দালানকোঠা নির্মাণ করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

ভূমিকম্প আগাম বার্তা দিয়ে আসে না। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় মানুষের করণীয় হলো আগাম সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেওয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় ঝুঁকি এড়ানোর জন্য রাজউককেই দায়িত্ব নিতে হবে ঢাকার ভবনগুলো নতুনভাবে পরীক্ষা করে ত্রুটিপূর্ণ বা ডিফল্ট ভবনগুলো ভেঙে ফেলার জন্য। পাশাপাশি, জাতীয় ভবন নির্মাণ নীতিমালা মেনে চলতে জনগণকে সতর্ক ও সচেতন করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র : আজকের পএিকা,,,,,

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED