Loading Now

ছাদ থেকে লাফিয়ে মৃত্যু: বডি শেমিং-বুলিংয়ে ‘বিপর্যস্ত’ ছিলেন ইস্ট ওয়েস্ট শিক্ষার্থী মুশফিক

অনলাইন ডেক্স ।।

শরীরের গঠন ও গায়ের রং নিয়ে স্কুলজীবন থেকে সহপাঠীদের ‘অস্বাভাবিক আচরণ’ সইতে হয়েছে ডি এম মুশফিকুজ্জামানকে। কখনো কখনো শিক্ষকরাও তাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করেছেন। স্কুল-কলেজ পেরিয়ে মুশফিক পা রাখেন উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠে। কিন্তু সেখানেও একই রকম আচরণ। সহপাঠীদের অব্যাহত হাসি-ঠাট্টা তরুণ মনে দাগ কাটে। ক্রমে তা রূপ নেয় বিষাদে। সইতে না পেরে ‘আত্মহত্যার’ পথ বেছে নেন বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুশফিকুজ্জামান।

মুশফিকের কয়েকজন সহপাঠী, দুজন শিক্ষক, স্কুলজীবনের বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে বডি শেমিংয়ের কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকার বিভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের ধারণা, সহপাঠীদের ঠাট্টা-বিদ্রূপে অভিমান করে ছাদ থেকে লাফ দিয়েছেন মুশফিক।

যদিও পুলিশ বলছে, সিসিটিভির ফুটেজে তারা মুশফিককে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়তে দেখলেও ময়নাতদন্তের আগে এটি ‘আত্মহত্যা’ নাকি ‘হত্যা’ তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। মুশফিকের পরিবারও দাবি জানিয়েছে, তাদের সন্তান পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার কি না, তা খতিয়ে দেখতে।

জানা যায়, মুশফিকুজ্জামান ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথমেটিকস অব ফিজিক্যাল সায়েন্স বিভাগের প্রথমবর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাদের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামে। মুশফিকের বাবার নাম বি এম মুখলেছুজ্জামান। তার মা কমলা আক্তার স্কুলশিক্ষিকা। বাবা-মায়ের সঙ্গে মুশফিক খিলগাঁও থানার পাশে একটি বাসায় বসবাস করতেন। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে বড় মুশফিক।

যেভাবে হয় মুশফিকের মরদেহ উদ্ধার
পুলিশ ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিকেল ৪টার দিকে ক্যাম্পাসের ড. ফরাসউদ্দিন ভবন ও মূল ভবনের মাঝের ফাঁকা জায়গায় একটি নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তরকে জানালে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে বাড্ডা পুলিশ ফাঁড়ির একটি টহল দল ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। এসময় তার কাছে থাকা পরিচয়পত্র ও সহপাঠী-শিক্ষকরা পরিচয় নিশ্চিত করেন। পরে মরদেহ সুরতহাল শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।

বাড্ডা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানা বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আমরা গিয়ে মরদেহ পেয়েছি। সুরতহাল দেখে মনে হয়েছে ছাদ থেকে পড়ে ওই শিক্ষার্থী মারা গেছেন। তার শরীরে তেমন গুরুতর আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। মুখ দিয়ে লালা ঝরছিল। কিছু কিছু জায়গায় হালকা ছিলে গেছে। সুরতহাল শেষে মরদেহ ঢামেক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’

সহপাঠীদের সঙ্গে ‘বাগবিতণ্ডা’, ক্লাস থেকে বেরিয়ে যান মুশফিক
ফরাসউদ্দিন ভবনের একটি শ্রেণিকক্ষে মুশফিকদের ক্লাস হওয়ার কথা ছিল। তার আগে শ্রেণিকক্ষে অপেক্ষা করছিলেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে মুশফিক বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে গল্প-আড্ডায় মেতে ছিলেন। হঠাৎ তাদের মধ্যে শুরু হয় তর্ক-বিতর্ক।

ক্লাসে থাকা মুশফিকের এক সহপাঠী নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমরা সবাই ম্যামের (শিক্ষিকা) জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সবাই গল্প-আড্ডায় মেতে ছিলাম। তখন মুশফিককে কেউ একজন কিছু বলে। তখন মুশফিকও এক বান্ধবীকে নিয়ে মজা করে একটি কথা বলে এবং উচ্চস্বরে হেসে ওঠে। এসময় অন্যরা বলে এমন উচ্চস্বরে হেসো না, আমাদের ডিস্টার্ব হচ্ছে। এমনটা বলায় মুশফিক মন খারাপ করে বসে থাকে।’

একপর্যায়ে মুশফিক বলতে শুরু করেন- ‘তোমরাও আমাকে নিয়ে অনেক মজা করো, হাসাহাসি করো। কই তখন তো কেউ বলে না যে ক্লাসে ডিস্টার্ব হচ্ছে। আসলে তোমরা আমাকে সহ্য করতে পারো না। খেয়াল করে দেইখো, কেউ পারফেক্ট না। সবারই খুঁত আছে।’

তখন আরেক বন্ধু বলে যে, ‘মুশফিক তোমাকে তো আমরা কিছু বলছি না। তাহলে এসব কথা বলছো কেন?’ মুশফিক তখন বলতে থাকে- ‘তোমাদের আচরণে বোঝা যায় তোমরা আমাকে নিয়ে সবসময় মজা করো। আমার সঙ্গে মিশতেও চাও না। আমি মোটা, কালো বলে এমন করো।’ এটা বলার পরপরই মুশফিক ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায়।

মুশফিকের সহপাঠী এই ছাত্রী আরও বলে, ‘আমরা ভেবেছিলাম মুশফিক চেয়ারম্যানকে অভিযোগ করতে গেছে। সবাই ভাবছিলাম এখনই শিক্ষকরা ক্লাসে এসে আমাদের বকা দেবেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর জানতে পারি যে, মুশফিকের মরদেহ নিচে পড়ে আছে।’

বিষয়টি নিয়ে মুশফিকের বিভাগের কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে রাজি হননি। একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘মুশফিক একটু শারীরিকভাবে স্থূল ছিল। কিন্তু শিক্ষকরা কেউ কখনো এ কারণে তাকে বাজে কথা বা মজা করেছেন- এমনটা শুনিনি। তবে সহপাঠীদের আচরণে সে কয়েকবার শিক্ষকদের কাছে অভিযোগ করেছিল বলে শুনেছি। তবে আমার কাছে কখনো মুশফিক কোনো অভিযোগ করেনি।’

স্কুলজীবন থেকেই বুলিংয়ের শিকার
ছোটবেলা থেকে মুশফিকুজ্জামানের শারীরিক গঠন কিছুটা স্থূল। গায়ের রংও ভারী। এ নিয়ে স্কুলজীবন থেকে মুশফিককে বুলিংয়ের শিকার হতে হয়েছে। বাবা-মা, পরিবার ও শিক্ষকদের মানসিক সাপোর্টে মুশফিক শৈশব-কৈশোর পেরিয়েছে। কিন্তু তরুণ বয়সে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বুলিং, বডি শেমিংয়ে বিপর্যস্ত হতে হয়েছে।

মুশফিকের স্কুলজীবনের বন্ধু আদিব আহমেদ তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘মুশফিক আমার স্কুলজীবনের বন্ধু। একই ক্লাসে বসেছি। ওই সময় থেকে দেখছি, ওর কথা বলা ও লুকিং নিয়ে অনেক সহপাঠী বুলিং করতো। এতদিন বুলিং সহ্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ওকে প্রাণ দিতে হলো! এটা মানতে পারছি না।’

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আল শাহরিয়ার ইমন ছিলেন মুশফিকের সহপাঠী। মুশফিকের মরদেহ উদ্ধারের দিন (২০ নভেম্বর) রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি ভিডিও শেয়ার করেন। তাতে মুশফিককে কীভাবে বুলিং, বডি শেমিং করা হতো তা তুলে ধরেছেন ইমন।

ভিডিওতে আল শাহরিয়ার ইমন বলেন, ‘ক্লাসে আমি ফার্স্ট বেঞ্চে বসতাম। মুশফিক ঠিক আমার পাশে বসতো। মুশফিক যখনই স্যারের কাছে পড়া নিয়ে জিজ্ঞেস করতো, তখন অন্তত ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী ওর দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকাতো, হাসতো। কারণ কী? কারণ হলো- মুশফিকের কথা বলার ধরন একটু ভিন্নরকম; মুশফিক দেখতে কালো; মুশফিক একটু হেলদি। যার কারণে অলমোস্ট এভ্রিওয়ান ওর দিকে খারাপ নজরে তাকাতো। মুশফিক যখন মৃত অবস্থায় পড়েছিল, সেখানেও তাকে বডি শেমিং করা হয়েছে। একটা লাশ পড়ে আছে; হি ইজ অলরেডি ডেড। তার লাশটাকে নিয়েও বডি শেমিং করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘মুশফিক খুব ভালো একজন স্টুডেন্ট। ও অনেক ভদ্র। ওর কথা বলার ধরন, আচার-আচরণ খুবই ভালো। এত ভালো একটা ছেলে কিন্তু তার দেহের বর্ণ কালো, সে মোটা। আমার যে ক্লাসমেট তারা এটাই ভাবে যে, খুবই বিশ্রি মুশফিক। কতটা নিকৃষ্ট হলে একটা ডেড বডি পড়ে আছে, সেটা নিয়েও বডি শেমিং করছে ওরা।’

ইমন বলেন, ‘আমার সহপাঠীদের আলোচনার বিষয় ছিল এই ছেলে (মুশফিক) এমন করে কথা বলে কেন? এর ড্রেসআপ এমন কেন? দেখতে এমন কেন? কতটা দুঃখজনক ব্যাপার। আমার ক্লাসমেট যারা আছো, তোমরা যে বডি শেমিং করছো; তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ আমি। তোমরা এবার সুখী হও।’

বডি শেমিং-বুলিং ভয়াবহ মানসিক নির্যাতন। একজন শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা খুবই কাছের মানুষ হয়। প্রতিদিন তাদের সঙ্গে ক্লাস করা, গল্প-আড্ডা, ঘোরাঘুরি করে। কিন্তু তারাই যখন প্রতিনিয়ত কারও শারীরিক গঠন, গায়ের রং বা স্মার্টনেস নিয়ে বাজে কথা বলে, কটূক্তি করে- তাতে মানসিকভাবে বিপর্যয় ঘটে।- মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ

মুশফিকের মা স্কুলশিক্ষিকা কমলা আক্তার বলেন, ‘ছোটবেলায় অন্যরা কিছু বললে বাসায় এসে জানাতো। এখন বড় হয়ে গেছে, এখন কিছু বলে না। তারপরও ওকে মন খারাপ করে থাকতে দেখতাম। জিজ্ঞেস করলেও বলতো না। আমি বুঝতাম যে, ওর মনটা খারাপ। কেউ হয়তো কিছু বলেছে। তবে এ কারণে আমার ছেলেটা আত্মহত্যার করবে, এটা আমি বিশ্বাস করি না।’

কী বলছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ
মুশফিকুজ্জামানের মৃত্যু ঘিরে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খোলাসা করে কিছু জানায়নি। শুধু রেজিস্ট্রারের সই করা একটি শোকবার্তা দেওয়া হয়েছে। তাতে মুশফিকের আত্মার শান্তি কামনা ও পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানানো হয়।

 

বিষয়টি নিয়ে জানতে গত ২০ নভেম্বর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত কয়েক দফা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আনিসুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি কল রিসিভ করেননি।

পরে কয়েকজন সহকারী প্রক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা গণমাধ্যমে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। দুজন সহকারী প্রক্টর জানান, ওই শিক্ষার্থী বুলিং বা বডি শেমিংয়ে শিকার হয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার বিভাগের শিক্ষকরা এ নিয়ে আগে কখনো অভিযোগ পেয়েছেন কি না, তা পর্যালোচনা করা হবে। এ নিয়ে কমিটি করা হতে পারে বলে জানান তারা।

পরিবার বলছে ‘হত্যাকাণ্ড’, তদন্তের দাবি
মুশফিক বডি শেমিং ও বুলিংয়ের শিকার। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করা একজন ছেলে এ কারণে আত্মহত্যা করবে, তা মানতে পারছে না পরিবার।

মুশফিকের বাবা বি এম মুখলেছুজ্জামান বলেন, ‘তিন-চারদিন আগে পড়াশোনা নিয়ে কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে মুশফিকের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছিল। বিষয়টি তার মায়ের কাছ থেকে আমি শুনেছি। ছেলে বলেছিল, তারা তাকে ছাদে নিয়ে যেতে চাইতো। এজন্য আমাদের সন্দেহ হচ্ছে, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হতে পারে।’

বডি শেমিং-বুলিংয়ে ‘বিপর্যস্ত’ ছিলেন ইস্ট ওয়েস্ট শিক্ষার্থী মুশফিক

 

তিনি আরও বলেন, ‘যেটা শুনতে পাচ্ছি যে, মুশফিককে বুলিং করা হতো। তার শরীর নিয়ে, গায়ের রং নিয়ে বাজে কথা বলা হতো। যদি সেটা সত্য হয়ে থাকে, তাহলে যারা আমার ছেলেকে এ পথে যেতে বাধ্য করেছে; তাদেরকে প্ররোচনার অপরাধে শাস্তি দিতে হবে।’

মুশফিকের মা কমলা আক্তার বলেন, আমার ছেলেকে নিয়ে এমন মন্তব্য করছেন অনেকে- যেন কালো হয়ে জন্ম নেওয়াটাই অপরাধ! আমার ছেলেটা যদি কালো হয়ে জন্ম নিতো তবুও ওকে এমনভাবে বলার অধিকার কে দিয়েছে? ওকে বডি শেমিং করে কার কার মনে শান্তি হয়েছে?

তিনি বলেন, আমার ছেলে অনেক ভালো, অনেক সহজ-সরল ছিল। শুধু পড়ালেখা আর ফ্যামিলি নিয়ে থাকতো। কোনো বাজে কাজে সময় নষ্ট করতো না। প্রত্যেকটা শিক্ষকের খুব পছন্দের ছিল। কোনো সময় অন্যায়ের পথে চলেনি। স্বাভাবিকভাবেই ভার্সিটিতে গেলো প্রতিদিনের মতো, আমার ছেলেটা আত্মহত্যা করতে পারে না। আমার ছেলেকে আমি চিনি। ওর মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা হতেই পারে না। এটা কোনভাবে মেনে নেওয়া যায় না। আমরা সঠিক তদন্ত চাই।

মুশফিকের চাচা মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘যতকিছুই হোক আমাদের মুশফিক লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে কেউ ফেলে দিয়েছে নাকি ভুলবশত পড়ে গেছে, তা তদন্ত করে বের করতে হবে।’

পুলিশের ধারণা ‘আত্মহত্যা’, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের অপেক্ষা
ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসটি আফতাবনগরের প্রবেশমুখে। এটি বাড্ডা থানার মধ্যে পড়ে। বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার পর আমরা ওই ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছি। সেখানে দেখা যায়, মুশফিকুজ্জামান ক্যাম্পাসে এসে ক্লাস করেন। পরে ক্লাস থেকে বের হয়ে ছাদে ওঠেন। তিনি ছাদে ওঠার এক ঘণ্টা আগে ও পরে অন্য কাউকে ওই ভবনের ছাদে উঠতে দেখা যায়নি। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করেও দেখেছি, ওই শিক্ষার্থী ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পড়ে যান। এ কারণে প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে।’

মামলা বা আইনগত ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে ভিন্ন কিছু এলে অথবা পরিবার বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করলে- তা বিবেচনা করে তদন্ত করা হবে।’

শেমিং-বুলিং বন্ধে সব শিক্ষার্থীদের পরামর্শের আওতায় আনতে হবে
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বডি শেমিং-বুলিং ভয়াবহ মানসিক নির্যাতন। যখন খুব কাছের মানুষগুলো এ ধরনের শেমিং করে, তখন তা মানুষের মনে বড় আঘাত করে। একজন শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা খুবই কাছের মানুষ হয়। প্রতিদিন তাদের সঙ্গে ক্লাস করা, গল্প-আড্ডা, ঘোরাঘুরি করে। কিন্তু তারাই যখন প্রতিনিয়ত কারও শারীরিক গঠন, গায়ের রং বা স্মার্টনেস নিয়ে বাজে কথা, কটূক্তি করে- তাতে মানসিকভাবে বিপর্যয় ঘটে। যত শক্ত মানুষই হোক না কেন, অব্যাহত শেমিং-বুলিংয়ের ক্ষত সইতে পারে না।’

 

তিনি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এ ধরনের শেমিং ও বুলিং বন্ধে সব শিক্ষার্থীকে নিয়ে কাজ করা উচিত। শুধু যারা ভিকটিম তাদের পরামর্শ দিলে হবে না। যারা এগুলো বুঝে বা না বুঝে করছে; তাদেরও পরামর্শের আওতায় আনতে হবে। শিক্ষকদের বেশি সচেতন হতে হবে। পাশপাশি এটিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়বে।’

তথ্য সূত্র : জাগো নিউজ,,,,

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED