Loading Now

ভূমিকম্প নিয়ে আপাতত ‘স্বস্তির বার্তা’

অনলাইন ডেক্স ।।

জনমনে আতঙ্ক ছড়ানো ভূমিকম্প নিয়ে স্বস্তির বার্তা দিয়েছেন আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক মো. মমিনুল ইসলাম। তার মন্তব্য, বারবার ভূমিকম্প হওয়ার বিষয়টি সিসমোলজির দৃষ্টিকোণ থেকে স্বাভাবিক। এ নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

গত শুক্রবার (২১ নভেম্বর) ভয়াবহ ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে ঢাকাসহ সারাদেশ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন কয়েকশ’ মানুষ। ফাটল ধরেছে বহু ভবনে। হেলে পড়েছে কয়েকটি।

তারই মধ্যে শনিবার (২২ নভেম্বর) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিন দফায় ফের কেঁপে ওঠে দেশ। এই ভূকম্পনের নাম ‘আফটার শক’, যেটি মূলত বড় ভূমিকম্পের পরে হয়ে থাকে। সবমিলিয়ে আতঙ্কিত সারাদেশের মানুষ।

এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ মমিনুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘পরপর ঘটে যাওয়া ছোট কম্পনগুলো মূলত ‘আফটার শক’। যা প্রধান কম্পন বা ‘মেইন শকের’ শক্তি নির্গমনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।’

তিনি জানান, আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত এমন ছোট কম্পন অনুভূত হতে পারে। তবে আমাদের অবজারভেশন অনুযায়ী, আপাতত বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি নেই।’

আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক মমিনুল ইসলামের এই বক্তব্য অনুযায়ী, সোমবার (২৪ নভেম্বর) বেলা ১১টা পর্যন্ত ‘আফটার শক’ অথবা মৃদু ভূমিকম্প হতে পারে।

তিনি বলেন, ‘গত পরশুদিনের (শুক্রবার) কম্পনটিকে আমরা মেইন শক হিসেবে মনে করি। একটি বড় আর্থকোয়েকের আগে প্রি-শক এবং পরে আফটার শক হয়ে থাকে। গতকাল (শনিবার) যে ছোট ছোট কম্পনগুলো অনুভূত হয়েছে, তা হলো আফটার শক। একটি ইভেন্ট (ভূমিকম্প) ঘটার পরে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত ছোট ছোট কম্পন হতে পারে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’

 

এদিকে পরপর কম্পনের পর শুক্রবারের বড় ভূকম্পনের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মানুষ আতঙ্কে আজও খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন। রাজধানী বাড্ডাতেও একই চিত্র দেখা গেছে। এর মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, ‘খুব শিগগির আবার বড় ভূমিকম্প হবে।’ এ খবর মানুষের মধ্যে আরও বেশি ভয় সৃষ্টি করে।

আবহাওয়াবিদ মমিনুল ইসলাম এই গুজবকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘এ ধরনের ভবিষ্যৎবাণী কেউ দিতে পারে না। ভূমিকম্পের ফোরকাস্ট বা পূর্বাভাসের কোনো সুযোগ নেই। আমরা বারবার বলছি, বাংলাদেশ মেট্রোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্টকে ফলো করুন।

তিনি বলেন, ‘ধানমন্ডিতেও নাকি ১২টার সময় লোকজনকে বাইরে যেতে বলা হয়েছে। এখন যেগুলো হচ্ছে, তা কেবলই আফটার শক। এটি সবসময় মূল শকের চেয়ে ছোট হবে এবং অলরেডি বেশ কয়েকটি হয়ে গেছে, হয়তো আর নাও হতে পারে।’

 

তার মতে, ‘বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান তিনটি সক্রিয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে হওয়ায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি সব সময়ই থাকে। এই প্লেটগুলো হচ্ছে- ইউরেশিয়ান প্লেট (উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত), ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেট (যার ওপর বাংলাদেশের অবস্থান) এবং বার্মা মাইক্রোপ্লেট (পূর্বে অবস্থিত)।’

তিনি জানান, যেকোনো বড় ভূমিকম্প সাধারণত প্লেট বাউন্ডারি বা ফল্ট লাইনের আশেপাশে হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক কম্পনগুলো সরাসরি প্লেট বাউন্ডারিতে না হলেও এগুলো হয়তো মূল ফল্ট লাইনের সাবফল্ট হিসেবে আসছে।

জনসাধারণকে শান্ত থাকার এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু একটি ৫.৭ মাত্রার কম্পনকে ভূখণ্ড অ্যাবজর্ব করতে পেরেছে, তাই ৩ বা ৪ মাত্রার আফটার শক নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’

তিনি বলেন, আফটার শকগুলো সাধারণত মেইন শকের পর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। ভূমিকম্পের পূর্বাভাস সংক্রান্ত কোনো গুজবে কান না দিয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ভূমিকম্পের আতঙ্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বলা হয়েছে। বেসরকারি একাধিক প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।

 

এছাড়া মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সকাল আটটা পর্যন্ত গ্যাস কূপ খনন ও ভূতাত্বিক জরিপ কাজ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ভূমিকম্পের আগাম সতর্কবার্তা পাওয়া যায়, এমন অ্যাপ তৈরি করা যায় কি না, সেটিও বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

তথ্য সূত্র : ঢাকা মেইল,,,,

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED