Loading Now

বরিশালে এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাসী কার্যক্রমে ভীতিকর পরিবেশ জনজীবনে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
হঠাৎ করেই অশান্ত হয়ে উঠেছে বরিশাল। আর এই অশান্তির নেপথ্যে বড় কারণ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার। বিশেষ করে বরিশাল নগরীর পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক। গত বুধবার রাতে নগরীর আলেকান্দা এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে দুর্বৃত্তরা মহড়া দেয়।এর আগে নগরের পলিটেকনিক কলেজ এলাকায় রামদা নিয়ে মহড়া দেয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল।এ ছাড়া গেল বুধবার রাতে যে এলাকায় অস্ত্র পদর্শন হয়েছে সে এলাকায় গুলি বর্ষন নতুন হলেও রামদা,দা নিয়ে মারামারি নিওনৈমিওিক ঘটনা।

স্থানীয় বাসিন্দারা তাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। নগরবাসী বলছে, এভাবে যদি প্রকাশ্যে অস্ত্র ব্যবহার করে সন্ত্রাসীরা মহড়া দেয়, তাহলে ভোটকেন্দ্রিক নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত হবে? তাই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরিশাল মহানগরীর সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপের বিকল্প নেই।

জানা গেছে, বরিশাল নগরীর রিফিউজি কলোনিতে প্রকাশ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও গুলির ঘটনা ঘটেছে গত বুধবার গভীর রাতে।

এ ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নগরীর নুরিয়া স্কুলের পেছনে সরদার মঞ্জিলের সামনে রাত আনুমানিক ১১টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই এলাকায় যৌথ বাহিনী অভিযান চালায়। গুলির ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ বৃহস্পতিবার ১৮ ডিসেম্বর সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
২৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি মোটরসাইকেলে করে দুই যুবক চলন্ত অবস্থায় গুলি ছুড়ছে। একই সময় সড়কের দুই পাশে দেশীয় অস্ত্র হাতে কয়েকজনকে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় দেখা যায়। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ আরো বেড়ে যায়। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছে, রিফিউজি কলোনির কসাই সালামের ছেলে রকি প্রতিপক্ষ নাকা কাটা রুবেলকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। রকি ও রুবেলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল।
সেই বিরোধের জেরেই প্রকাশ্যে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আল মামুন উল ইসলাম গুলির ঘটনা স্বীকার করে বলেছেন, মাদক কারবারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি দেশীয় অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের দেড় বছরেরও বেশি সময়ে বরিশালে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে তেমন সাফল্য নেই। এখানে অস্ত্রের ঝনঝনানি থামেনি। বৈধ ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের কোনো স্পষ্ট হিসাব নেই প্রশাসনের হাতে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সরকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তবে সবাই সে নির্দেশ মানেননি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বরিশাল মহানগরী ও জেলায় বেসামরিক নাগরিকদের নামে ১৯৭টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে। এর মধ্যে সব অস্ত্র জমা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের বরিশাল জেলা সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে সেরনিয়াবাত আশিক আবদুল্লাহ, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিমউদ্দিনসহ একাধিক লাইসেন্সধারী এখনো অস্ত্র জমা দেননি। এসব অস্ত্রের একটি অংশ অপরাধীরা ব্যবহার করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বরিশাল জেলা শাখার আমির সিরাজুল ইসলাম বলেন, অস্ত্র দিয়ে মানুষকে ভয় দেখানো হবে, ভোটের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করা হবে। জনগণের জন্য এটা কোনোভাবেই নিরাপদ নয়। এই অস্ত্রের মাধ্যমে জনমত পাল্টে ফেলাও সম্ভব। অস্ত্রধারীরা এ কাজটি করতেই পারে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বরিশাল-৫ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘পুলিশের প্রায় ১০ হাজার অস্ত্র অন্যদের হাতে চলে গেছে। প্রশাসন যদি সত্যিই রাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করে, তাহলে ইচ্ছা করলে এসব অস্ত্র বের করতে পারবে।’

বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী ও মহানগরের আমির জহির উদ্দিন মুহাম্মাদ বাবর বলেন, তফসিল ঘোষণার পর সব লাইসেন্স করা অস্ত্র জমা নেওয়ার কথা। কিন্তু এখনো কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। এ কারণে সবাই উদ্বিগ্ন।

পুলিশ আশ্বাস দিচ্ছে, অভিযান জোরদার করা হচ্ছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছে। অবৈধ অস্ত্র বা যেকোনো হুমকি আমরা অ্যাড্রেস করব। অভিযান ধারাবাহিকভাবে চলমান থাকবে।’

 

 

 

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED