Loading Now

বাজারে সয়াবিন তেলের তীব্র ‘সংকট’, বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে

 

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

বরিশালে হঠাৎ করে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ বাজারেই মিলছে না এ তেল।

দু-একটি দোকানে পাওয়া গেলেও বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটারে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেশি দামে।
সুপারশপগুলোতে তেল থাকলেও একজন ক্রেতাকে একটির বেশি বোতল দেওয়া হচ্ছে না। চাইলেই দোকানে মিলছে না নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি। বোতলজাত সয়াবিন তেলও বাজার থেকে উধাও। দোকানিদের অভিযোগ, সয়াবিন বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক স্বার্থে এটা করা হচ্ছে। তাদের যেসব পণ্য বাজারে চলে না, সেগুলো চালাতে আমাদের বাধ্য করছে। তেল চাইলেই সঙ্গে আটা, ময়দা, সুজিসহ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে অন্যান্য পণ্য। কখনো আবার বাধ্য করা হচ্ছে প্যাকেটজাত পোলাউয়ের চাল কিনতে। এসবের কোনো একটি না নিলে সয়াবিন তেল দেওয়া হচ্ছে না। তেল কোম্পানিগুলোর এই আচরণের নেতিবাচক প্রভাব বরিশালের বাজারে পড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে সয়াবিন তেলের দাম অনেক বেড়ে গেছে। শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বরিশালের বাজার ও দোকান গুলোতে এমন চিত্র দেখে গেছে।

শুক্রবার প্রতি লিটার বোতলজাত তেল ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করছে। আধা লিটারের বোতল পাওয়া যাচ্ছে দোকানভেদে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। খোলা তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা লিটার দরে।

দোকানদাররা জানান, এক সপ্তাহ ধরে সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো কোনো তেল আনছে না। পাইকারি বাজারে গিয়েও তেল পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো কোনো দোকানে দুই-চার লিটার তেল পাওয়া গেলেও দাম বেশি। এজন্য আমরাও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছি।

কেন বাড়তি দাম নিচ্ছে, এ নিয়ে তাদের কাছে বক্তব্য নেই। দু-একটি দোকান থেকে বিক্রেতারা পাল্টা প্রশ্ন করেন, কবে বাজারে বেশি তেল পাওয়া যাবে?

বটতলা বাজারের মুদি দোকানি রাজিব হাওলাদার বলেন, ‘২ সপ্তাহ ধরে তেল বিক্রি করছে না কোম্পানিগুলো। তীর, পুষ্টি, রূপচাঁদা, ফ্রেশসহ প্রায় সব তেল কোম্পানি এ কাজ করছে। তেল চাইলেই সঙ্গে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাদের কোম্পানির প্যাকেটজাত আটা, ময়দা, সুজিসহ অন্য যে কোনো পণ্য। না নিলে সাফ বলে দিচ্ছে, নেই সয়াবিন।’

আরেক দোকানি শফিকুল বলেন, ‘অনেক অনুনয় করলে এক কার্টন তেল দিচ্ছে তারা। কিন্তু মাত্র ৪ বোতল তেল নিয়ে কী করব আমরা?’

বরিশালের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যকেন্দ্র বড়বাজারের ব্যবসায়ী শ্যামল সাহা বলেন, ‘কখনো কখনো তেলের সঙ্গে পোলাউয়ের চাল নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। অথচ প্যাকেটজাত এ চাল ক্রেতারা নিতেই চান না। বাজারে খোলা বিক্রি হওয়া পোলাউয়ের চালের মান অনেক ভালো। দামও প্যাকেটজাতের চেয়ে কম। মফিজের বস্তায় আসা এক কেজি পোলাউয়ের চালের দাম ১১৮ টাকা। প্যাকেটজাত পোলাউয়ের চালের দাম কেজিপ্রতি ১৩৮/১৪০ টাকারও বেশি। তাছাড়া এসব কোম্পানির প্যাকেটজাত আটা, ময়দা, সুজিসহ আরও অনেক পণ্য নিতে চায়ন না ক্রেতা। অচল এসব পণ্য জোর করে চালাতেই সয়াবিন তেলের সঙ্গে মিলিয়ে তা কিনতে বাধ্য করছেন তারা। মাঝ থেকে বিপদে পড়ছি আমরা। ফলে দোকানে সয়াবিন ওঠানো বন্ধ বা কমিয়ে দিয়েছে অনেক দোকানি। ক্রেতারাও চাহিদা অনুযায়ী পাচ্ছে না তেল।’

বেশ কয়েকজন দোকানি বলেন, ‘পণ্যের অর্ডার নিতে আসা বিক্রয় প্রতিনিধির কাছে তেল চাইলেই সঙ্গে আর কী দেবে জিজ্ঞাসা করে। দরকারি পণ্যের কথা বললে জানান তেল নিতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে অন্য ২/১টি পণ্যের অর্ডার দিতে হয়। নয়তো মেলে না চহিদামতো সয়াবিন।

কলেজ অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা রিপন বল্লভ বলেন, ‘তেল চাইলেই সঙ্গে প্যাকেটজাত অন্য কিছু দেওয়ার চেষ্টা করেন দোকানি। কিন্তু যেটা আমার লাগবে না বা কম দামে কিনতে পারব, সেটা তেলের সঙ্গে কেন নেব? বৃহস্পতিবার বাজারে গিয়ে বোতলজাত না পেয়ে খোলা সয়াবিন তেল কিনেছি। শুনেছি এতে নাকি স্বাস্থ্যঝুঁকি। তারপরও করার কিছু নেই।’

অচল পণ্য চালাতে তেল কোম্পানিগুলোর এ সিন্ডিকেটের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে নগরীর উপকণ্ঠে থাকা দোকানগুলোয়। ঘড়িয়ার পাড় এলাকার এক দোকানি বলেন, ‘সয়াবিন তেলের সঙ্গে পোলাউয়ের চাল ধরিয়ে দিয়েছে তেল কোম্পানি। পোলাউয়ের চাল তো নিত্য বিক্রি হয় না। তাছাড়া প্যাকেটজাত পোলাউ চাল নিতেও চায় না কেউ। ক্ষতি পোষাতে একটু বেশি দামে বিক্রি করছি সয়াবিন। না হলে তো বাপের জমি বেঁচে দোকান চালাতে হবে। রুপাতলী বটতলা, কালিজিরাসহ আরও কয়েকটি এলাকার দোকানিরাও একই কথা বলেন।’

এদিকে বাজারে পামওয়েল মিলছে ১৮০ টাকা লিটার দরে। তবে শীতের দিন হওয়ার কারণে পামওয়েল নিয়ে স্বস্তিতে নেই দোকানদাররা। রোদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কোথাও কোথাও তেলের ছোট্ট ড্রাম বা বোতলের লম্বা সারি রেখে দেওয়া হয়েছে জমে যাওয়া পামওয়েল তরল হওয়ার জন্য।

সহায়ক পণ্য ছাড়া তেল বিক্রির অভিযোগের বিষয়ে সরাসরি কথা বলতে রাজি হয়নি তেল কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা। তাদের নিয়োগকৃত ডিলার, ডিস্ট্রিবিউটররাও যেন কুলুপ এঁটে বসে আছেন মুখে। চাকরি হারানোর ভয়ে নাম-পরিচয় না প্রকাশের শর্তে একাধিক বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, ‘স্টক ক্লিয়ার করার একটা চাপ আছে হেড অফিসগুলো থেকে। এ অবস্থায় যেসব পণ্য খুব একটা চলে না, সেগুলো চালাতেই এমন কৌশল। হেড অফিসও জানে বিষয়টি। কেবল যে একটি তা নয়, প্রায় সব কোম্পানি চলছে একই কৌশলে। তাছাড়া দেশে পলিথিনবিরোধী অভিযান জোরদার হয়েছে। স্টক ক্লিয়ার করতে না পারলে পরে হয়তো পলি প্যাকে থাকা এসব পণ্য উঠিয়ে নিতে হতে পারে। সেজন্যও এটা করা হচ্ছে।’

 

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED