আগৈলঝাড়ায় ২৪৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী মারবেল মেলা ও নবান্ন উৎসব
আগৈলঝাড়া প্রতিনিধি ।।
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ঐতিহ্যের মারবেল মেলা ও নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রামানন্দের আঁক গ্রামে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
মেলায় শুধু আগৈলঝাড়া উপজেলাই নয়, পাশের কোটালীপাড়া, টুঙ্গিপাড়া, উজিরপুর, ডাসার, মাদারীপুর, কালকিনি, গৌরনদী, বানারীপাড়া, বাকেরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার কয়েক হাজার বিভিন্ন বয়সী মানুষ অংশ নেয়।
মেলা কমিটির সভাপতি নির্মল মণ্ডল জানান, ২৪৫ বছর আগে রামানন্দের আঁক গ্রামের মেয়ে সোনাই চাঁদের বিয়ে হয়। সাত বছর বয়সে স্বামী মারা গেলে নিঃসন্তান অবস্থায় শ্বশুরবাড়ির একটি নিমগাছের গোড়ায় শিবের আরাধনা ও পূজা-অর্চনা শুরু করেন। ক্রমশ সেটি ছড়িয়ে পড়লে ওই স্থানে বাৎসরিক পূজার আয়োজন করা হয়। সোনাই চাঁদের জীবদ্দশায় আনুমানিক ১৭৮০ সাল থেকে শুরু করে অদ্যাবধি প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তির দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৈষ্ণব সেবা, নিরামিষ খাবার, নবান্ন উৎসব, মারবেল মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
প্রতি বছর এই দিনে বৈষ্ণব সেবা, নাম সংকীর্তন, কবিগান শেষে সোয়ামণ (৫০ কেজি) চালের গুঁড়ার সঙ্গে সোয়ামণ আখের গুড়, ৫০ জোড়া নারকেল ও প্রয়োজনীয় কলাসহ ন্যান্য উপাদান মিশিয়ে নবান্ন তৈরি করে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের বিতরণ করা হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম আকর্ষণ পৌষ সংক্রান্তিতে বাস্তুপূজা উপলক্ষে ২৪৫ বছর ধরে এ গ্রামে মারবেল মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
সত্তরোর্ধ্ব মনিমোহন বালা জানান, আমাদের পূর্বপুরুষরা এ খেলার মাধ্যমে মেলার প্রচলন করেছিলেন, যা আজও অব্যাহত রয়েছে। তাদের উত্তরসূরি হিসেবে আমরা সেই প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মারবেল খেলা চলছে। রাস্তার ওপর, বাড়ির আঙিনা, অনাবাদি জমি, পুকুরপাড়, বাগানসহ সর্বত্রই মারবেল খেলার আসর বসেছে। বিশ্বাস বাড়ির পাশের জমিতে বসেছে বাঁশ-বেত শিল্প সামগ্রী, মনিহারি, খেলনা, মিষ্টি, ফলসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান। মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা।
মেলায় মারবেল বিক্রেতা ত্রিমুখী গ্রামের প্রদীপ বল্লভ বলেন, প্রতি বছর মারবেল বিক্রির জন্য এ দিনের অপেক্ষায় থাকি। বেচাকেনা অন্য বছরের চেয়ে ভালো। একশত পিস মারবেল ২০ টাকায় বিক্রি করছি।
বাকাল গ্রামের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মিরাজ ফকির বলে, সারাবছর টাকা জমিয়েছি মারবেল খেলার জন্য। শিশু থেকে শুরু করে কিশোর, কিশোরী, যুবক-যুবতীরা মেলার প্রধান আকর্ষণ মারবেল খেলায় অংশ নেয়।
পঞ্জিকা মতে, প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তিরর দিন নাম সংকীর্ত্তন ও গোসাই নবান্ন মহাউৎসবের মাধ্যমে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে প্রায় অ২শ ৪৫ বছর যাবত। আর এই উৎসবকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে মারবেল খেলার মেলা।
এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া থানার ওসি (তদন্ত) সুশংকর মল্লিক জানান, মারবেল মেলায় আগত সাধারণ লোকজন ও ব্যবসায়ীদের জন্য আমরা এসেছি। মেলায় মারবেল খেলার জন্য অনেকে দূরদূরান্ত থেকে এসেছেন। তাদের জন্য পূর্ব থেকে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
Post Comment