Loading Now

বিএনপির নাম ভাঙিয়ে নগর ভবনে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণে বাবুল চৌধুরী ও মাসুদ গংদের!

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশনেও। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিএনপির নাম ভাঙিয়ে নগর ভবনে চলছে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ। এ নিয়ে শুরু হয়েছে দুই গ্রুপে দ্বন্দ্ব, যা রূপ নিয়েছে সংঘাতেও।

জানা গেছে, এরশাদের শাসনামলে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আতহারুল ইসলাম চৌধুরী বাবুল গত দুই দশকের বেশি বরিশাল বিএনপিতে কোনো পদে নেই। রাজধানীর বাসিন্দা হওয়ায় স্থানীয় কোনো কর্মসূচিতেও তাঁকে দেখা যায় না। তবে সরকার পতনের পর বিএনপির কিছু লোক নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে নগর ভবনে সিন্ডিকেট গড়ার অভিযোগ উঠেছে। গত কয়েক মাসে সিটি করপোরেশনে ঘটে যাওয়া একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনার হোতা এই সিন্ডিকেট। এ নিয়ে নগর ভবনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির আরেক পক্ষ নগর ভবনের নিয়ন্ত্রণ পেতে গত মঙ্গলবার বাবুল ও তাঁর সহযোগীদের ওপর হামলা করেছে।

নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদাররা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঠিকাদারি কাজের ভাগ-বণ্টনে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় বাবুল চৌধুরী, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান পিন্টু, ১০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক আহবায়ক ও নগর বিএনপির সদস্য জুলহাস উদ্দিন মাসুদসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে নগর ভবনে ঘাঁটি গাড়েন। দিনের বেশির ভাগ সময় তারা নগর ভবনে অবস্থান করেন। বিল ছাড়ানো,কাজ ভাগাভাগি,মিলাদ সহ অনান্য সামাজিক কাজের নামে ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের কাছ থেকে চাদা আদায় সহ বিভিন্ন ঘটনার অনুঘটক এরা।এদের বিরুদ্ধে কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাত পর্যন্তও অবস্থানের অভিযোগ রয়েছে। কোটেশনে দরপত্রের কাজ বাগানো, ঠিকাদারদের বকেয়া বিল পরিশোধসহ প্রায় সব বিষয়ে হস্তক্ষেপ রয়েছে তাদের।

এক পর্যায়ে বাবুল চৌধুরী প্রশাসনিক কার্যক্রমেও হস্তক্ষেপের চেষ্টা চালালে একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। এর রেশ না কাটতেই বিএনপির আরেক পক্ষ মঙ্গলবার দুপুরে নগর ভবনে পিন্টু ও বাবুল চৌধুরীর ওপর হামলা করে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রগুলো জানায়, মঙ্গলবার মহানগর যুবদলের সহসভাপতি সামসুল আলমের নেতৃত্বে পিন্টুর ওপর হামলা হয়। এ সময় বাবুল চৌধুরী এগিয়ে এলে তাঁকে গালাগালসহ ধাক্কাধাক্কি করা হয়।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সামসুল আলম জানান, তিনি পৌরসভা আমলের ঠিকাদার। আওয়ামী লীগের পতনের পর বিভাগীয় কমিশনার প্রশাসক হলে নগর ভবনে বিএনপি নামধারী একটি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। তাদের বিএনপিতে কোনো পদ নেই। তারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাসাজশে কোটেশনের উন্নয়ন কাজগুলো বাগাতে থাকেন।

বাবুল চৌধুরীকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, কোনো কোনো বড় ভাই আছেন যাদের সঙ্গে ছাত্র রাজনীতি করেছি, তাদের চরিত্র এমন– ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার কাজের লোভও সামলাতে পারেন না। দলের তরুণ ও ত্যাগী কর্মীদের ছোট কাজগুলো করার সুযোগ দেওয়ার জন্য বাবুল চৌধুরী ও পিন্টুকে বলেছিলাম। এ নিয়েই ঘটনার সূত্রপাত হয়।

তবে পিন্টু হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সামসুল আলমের সঙ্গে তাঁর কথা কাটাকাটি হয়েছে মাত্র। নিয়মিত নগর ভবনে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, তাঁর অনেক টাকা বকেয়া বিল রয়েছে। সেগুলো কীভাবে তোলা যায়, সেজন্য যান। নগর ভবনের কোনো বিষয়ে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

নগর ভবনের প্রকৌশল সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নগর ভবনে বড় অঙ্কের দরপত্র হয়নি। এ পর্যন্ত ২০টি গ্রুপে কোটেশনে দরপত্র হয়। যার প্রতিটির মূল্যমান সর্বনিম্ন ২ লাখ ও সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। ওই কাজগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও ভবিষ্যতের স্থায়ী সিন্ডিকেট গড়া নিয়ে বিএনপিপন্থি ঠিকাদারদের মধ্যে বিরোধ লেগেছে।

সিটি করপোরেশন ঠিকাদার সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর নগর ভবনে রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে সাধারণ ঠিকাদারদের মধ্যে ক্ষোভ ও নগর ভবনে অস্থিরতা চলছে।

বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানান, সাবেক ছাত্রদল নেতা বাবুল চৌধুরী দীর্ঘ বছর বিএনপির পদে নেই। তবে দলের সুসময়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারি কাজ নিয়ে নয়ছয়ের অভিযোগ রয়েছে। তিনি একাধিক চেক প্রতারণা মামলার আসামি। এলজিইডির একটি কাজে ৫০ লাখ টাকার নিরাপত্তা গ্যারান্টি জালিয়াতির ঘটনায় সাউথইষ্ট ব্যাংকের বরিশাল শাখার ব্যবস্থাপক সিরাজুল ইসলাম চাকরিচ্যুত হয়েছেন। ওই ঘটনায় বাবুলের বিরুদ্ধে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের করা মামলা বিচারাধীন।

সব অভিযোগ প্রসঙ্গে বাবুল চৌধুরী বলেন, সিটি করপোরেশনে তাঁর চৌধুরী কনস্ট্রাকশন নামে একটি লাইসেন্স রয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলে নবায়ন করতে না পারায় সেটি বাতিল হয়েছে। ওই লাইসেন্সটি পুনরুজ্জীবিত করতে নিয়মিত নগর ভবনে যান। নগর ভবনের অন্য বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন না বলে দাবি করেন। তাঁর সঙ্গে কারও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সাউথইষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে মামলার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।

মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন বলেন, করপোরেশনে যারা ঠিকাদারি কাজের নামে বিশৃঙ্খলা করেন, তারা বিএনপির কেউ নন। নগর ভবনে ঝামেলার কথা শুনেছি। বাবুল চৌধুরী দীর্ঘদিন বিএনপির কর্মসূচিতে অনুপস্থিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী জানান, নগর ভবনে ঠিকাদারদের মধ্যে হাতাহাতির বিষয় তাঁর জানা নেই। হয়তো তাদের মধ্যে কাজ পাওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছে।

 

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED