বৈশাখী মেলা সামনে রেখে শীতল পাটি তৈরিতে ব্যস্ত নারীরা
বাকেরগঞ্জ প্রতিনিধি ।।
শীতল পাটি বাংলার সুপ্রাচীন এক কুটির শিল্পের নাম। শীতল পাটি দেশের সভ্যতা, ঐতিহ্যের অংশ। আজ শীতল পাটি বিশ্বনন্দিত হলেও বরিশালের বাকেগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের হেলেঞ্চা গ্রামে শত বছর ধরে শীতল পাটি তৈরি করে আসলেও তাদের নেই কোনো স্বীকৃতি। সরকারি সহায়তা থেকেও বঞ্চিত তারা।
উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে গেলেই যতদূর দুচোখ যায় দেখা মিলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ জনপথের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয় এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে। কাঁঠালিয়া ও হেলেঞ্চ গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন এই কাঁঠালিয়া ও হেলেঞ্চা এই দুই গ্রামের বাসিন্দারা। এখনো এই দুই গ্রামে পাটিকর পেশায় টিকে আছে প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার। ফলে কাঁঠালিয়া ও হেলেঞ্চা গ্রাম ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।
কাঁঠালিয়া ও হেলেঞ্চা গ্রামের ভিতরে প্রবেশ করলেই ছোট ছোট টিন সেট ও আধাপাকা ঘর গুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষদের দেখা যায় নানান রঙ্গের শীতল পাটি বুনতে। দেশের অন্য সব জায়গার মতো এখানকার পাটিকরদের ভাগ্যের উন্নয়নও হয়নি তেমন একটা। তবে দরিদ্রতা যাতে গ্রাস করতে না পারে সেজন্য প্রতিনিয়ত এই গ্রামের পাটিকরদের চলছে সংগ্রাম। সারাবছর যেমন-তেমন গেলেও গরমকে ঘিরে এই গ্রামের শীতল পাটির বেশ ভালো কদরই থাকে। যদিও কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি আর পুঁজির অভাবে অনেকেই সরে গেছেন পাটি তৈরির কাজ থেকে।
বৈশাখ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলা হয় সেই মেলাকে সামনে রেখে পাটিকর পরিবারের নারী-পুরুষ সবাই মিলে রাত দিন পাটি বোনার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঘরের বারান্দা আর উঠোনজুড়ে বিরামহীনভাবে পাটির সুনিপুণ নির্মাণকাজ চলছে।আর তাদের নির্মিত পাটি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে কিনে নিচ্ছেন।
পাটিকর সৃতি রানি বলেন, আমাদের সবার পাইত্রাগাছ নেই। একটি পাটি বুনতে ৮০টি পাইত্রাগাছ লাগে। ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় ৮০টি পাইত্রা কিনতে হয়। বর্ষার মৌসুমে শীতলপাটির চাহিদা কমে যায়। এ সময় খুচরা ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারেন। তবে গরমের সময়ে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। এ জন্য বর্ষা এলে কর্জ করতে হয়। আবার গরমকালে সেই কর্জ পরিশোধ করে দায়সারা ভালো আছে তাদের পরিবার। সরকারিভাবে কোন সহায়তা পেলে আমরা আরো ভালো থাকতে পারতাম।
স্থানীয় পাটিকরদের দাবি সরকারি সহায়তা পেলে সুপ্রাচীন এই কুটির শিল্প টিকে থাকবে। না হয় এই কুটির শিল্প এক দিন হারিয়ে যাবে।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আফরোজ বলেন, পাটি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী গৃহায়নের কারুশিল্প। দেশে পাটিপাতা চাষ পরিবেশবান্ধব, জলবায়ু সহায়ক। এই খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ ও পণ্যের বৈচিত্র্য বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম করেছে সরকার। উৎপাদিত শীতল পাটি যাতে সহজভাবে বাজারজাত করা যায় সে জন্য নির্দিষ্ট হাটের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়াও এদেরকে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
Post Comment