বাজার পরিস্থিতি বেসামাল, ভোগ্যপণ্যের অসহনীয় দামে ক্রেতার হাঁসফাঁস
নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
প্রতিনিয়ত বেসামাল হচ্ছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে ডিমের দাম ডজনে প্রায় ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। তবে গরম পরায় কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। এছাড়া চাল, ডাল, আটা-ময়দা, ও ভোজ্য তেলসহ ভোক্তার প্রয়োজনীয় সব পণ্য অসহনীয় দরে বিক্রি হচ্ছে। বেশির ভাগ সবজির দামে চড়াভাব এখনো কাটেনি। তবে কিছু কিছু সবজি আগের চেয়ে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন-গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রতি কেজি চাল কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে। এদিকে ৫ আগস্টের পরে এক শ্রেনীর মানুষের আয় কমছে, অন্যদিকে নিত্যপণ্য কিনতে ব্যয় বাড়ায় সাধারণ মাসুষের হাঁসফাঁস অবস্থা তৈরি হয়েছে।
এদিকে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা উদ্যোগ থাকলেও বাগে আনা যাচ্ছে না পাইকারি ও খুচরা বাজারকে। ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের কারসাজিতে নানা ছুতায় লাগামহীন হয়ে পড়ছে বাজার। এরই মধ্যে সরকারের নানা পদক্ষেপের ফলে পেঁয়াজের ঝাঁজ কমিয়ে আনা হলেও রোজার ঈদের পরে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে পিয়াজের দাম। কিছুটা কমেছে আলু দাম। কিন্তু ডাল, তেল, কাঁচা মরিচ, আদা, রসুন মসলা জাত পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
শুক্রবার (১৬ মে) সকালে বরিশালের বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
দীর্ঘদিন বাজারে প্রোটিনের সস্তা উৎস হিসেবে পরিচিত ডিমের দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে ছিল। এখন দাম বাড়ায় তাদের কেউ কেউ উষ্মা প্রকাশ করছেন। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এতদিন ডিম বিক্রি করে লোকসান করেছেন খামারিরা। এখন দাম কিছুটা বাড়লে সেটি খামারিদের জন্য ন্যায্য হবে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বড় বাজারগুলোতে এখন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা ডজন হিসাবে। পাড়া-মহল্লায় প্রতি ডজন ডিম ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেখানে গত সপ্তাহেও এ দাম ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা।
তবে সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। বাজারে এখন ব্রয়লার ১৬০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে কিছু কিছু দোকানে গরুর মাংস কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি করার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। আগে ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন ৭৮০ টাকা দাম হাঁকাচ্ছেন অনেক বিক্রেতা। তবে দরদাম করে আগের দামে কেনা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
পুরোনো মিনিকেট চাল বাড়তি দামে বিক্রি হলেও কিছুটা কমেছে বাজারে নতুন আসা মিনিকেট। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পুরোনো মিনিকেট চাল যেখানে সর্বনিম্ন ৭২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, সেখানে নতুন মিনিকেটের কেজি ৭০ টাকা। তবে ভালো মানের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পুরোনো মিনিকেট চাল এখনো সর্বোচ্চ ৮৫-৮৬ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
বাজারে এখন গ্রীষ্মের পটোল-ঢ্যাঁড়সের মতো সবজিগুলো অন্যসময়ের তুলনায় কম দামে কেনা যাচ্ছে। এসব সবজি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪০-৬০ টাকায়। এছাড়া চিচিঙ্গা, ঝিঙে, কাকরোল, উস্তা, বেগুন ও বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়।
সবজি বিক্রেতা আলম হোসেন বলেন, গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ বেড়েছে, দামও কমছে। তবে বাজার এখনো ওঠানামা করছে। বৃষ্টিতে সরবরাহ কমলে দাম বাড়ছে। এছাড়া প্রতিদিনই দামে কিছুটা হেরফের হয়।
এদিকে চৌমাথা বাজারে পণ্য কিনতে আসা আর এক ক্রেতা মো: শাকিল বলেন, যে হারে পণ্যের দাম বাড়ছে সে হারে আয় বাড়ছে না। দেশে অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু যে সরকারই আসুকনা কেন তারা নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে উদাসীন। পণ্যের দাম নিয়ে হাহাকার তৈরি হয়েছে, ভোজ্য তেলের দাম বাড়িয়েছে। দাম কামানোর কোনো উদ্যোগ নেই। কারণ তাদের কোনো ক্ষতি হয় না। ক্ষতি হয় সাধারণ মানুষের।
অন্যদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। আগের দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। চাষের শিংয়ের কেজি (আকারভেদে) ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, রুইয়ের দাম কেজিতে বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, চিংড়ি ৭৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়, বোয়াল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, পোয়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ টাকা, কই ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
Post Comment