Loading Now

ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত পাঁচ শতাধিক বেদে পরিবারে

মুলাদী প্রতিবেদক ॥

মুলাদীতে পাঁচ শতাধিক বেদে পরিবারের মাঝে নেই ঈদ আনন্দ। ঈদে এসব পরিবার সরকারি কিংবা ব্যক্তি পর্যায়ে কোনো সহযোগিতা পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন বেদে নৌকার বাসিন্দারা। ভোটার হওয়া সত্ত্বেও কোনো নাগরিক সুবিধা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে বেদে পরিবারের। নির্বাচন ছাড়া কেউ তাদের খবর নেয়না বলে জানান তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌরসভার খেজুরতলা বাজার এলাকায় আড়িয়াল খাঁ নদের শাখা নদীর মোহনায় প্রায় ৩শ বেদে পরিবার রয়েছে। তেরচর ভাঙারমোনা এলাকায় আড়িয়াল খাঁ নদে রয়েছে ২০৫ বেদে পরিবার। এসব বেদে পরিবারের সবাই মুসলমান। পরিবারগুলোর কোনো জায়গা জমি কিংবা স্থায়ী কোনো ঘর নেই। তারা নদীতে নৌকায় বসবাস করেন। দীর্ঘদিন ধরে একই জায়গায় নৌকা রেখে বসবাস করায় খেজুরতলা বাজার এলাকায় বেদেরা মুলাদী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের এবং ভাঙারমোনা এলাকার বেদেরা পৌরসভার ৩নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার তালিকাভুক্ত হন।
বেদেদের অভিযোগ, ভোটার হলেও কোনো নাগরিক সুবিধা দেওয়া হয়না তাদের। শুধুমাত্র কয়েকজন বেদেকে জেলে কার্ড দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য জেলেরা নদীতে মাছ ধরে অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। নদীতে মাছ কম পাওয়ায় কেউ কেউ ৪-৫শ টাকায় দৈনিক মজুরীতে কাজ করে থাকেন। প্রতিদিনের আয় দ্বারা পরিবারের খরচ মেটানোই তাদের কষ্ট হয়। রমজানে কোনোমতে ইফতারের আয়োজন করেন তারা। আয়-ব্যায়ের পরে উদ্বৃত্ত না থাকায় ঈদের কথা ভাবতে পারছেন না তারা। পরিবারের সন্তানদের জন্য নামমাত্র ঈদের পোষাক কেনার সামর্থ্যও নেই বলে জানান বেদে পরিবারের কয়েকজন নারী।
খেজুরতলা বাজার এলাকার বেদে পরিবারের নারী সখিনা বেগম জানান, আগে সাপ খেলা আর তাবিজ বিক্রি করে সংসার চলতো। এখন সাপ খেলা, সিঙা লাগানো কিংবা ঝাড় ফুক আর তাবিজ কবজে মানুষ বিশ্বাস না করায় তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তাই মাছ ধরা এবং বিক্রি করাই একমাত্র পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীতে পর্যাপ্ত মাছ না পাওয়ায় বেদে সম্প্রদায়ের মাঝে দেখা দিয়েছে অর্থ কষ্ট।

 

তেরচর ভাঙারমোনা এলাকার বেদে নারী জহুরা বেগম বলেন, ‘পুরো রমজানে ভালো ইফতার মুখে দিতে পারিনি। দৈনিক যা আয় হয় তা দিয়ে চাল ডাল ও নিত্যপণ্য কিনতেই শেষ হয়ে যায়। বছরে একটা ঈদে বাচ্চাদের জামা কিনে দেওয়া, ঈদ আনন্দ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না।’

বেদে সরদার গওহর আলী বলেন, ‘মুলাদী পৌর এলাকায় ২টি জায়গায় ৫শতাধিক বেদে পরিবার রয়েছে। এসব পরিবারকে কোনো সরকারি সাহায্য সহযোগিতা করা হয়না। সমাজের বিত্তবানদের কাছ থেকেও কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়না। জনপ্রতিনিধিরাও নির্বাচন ছাড়া কোনো খবর নেননা। তাই পরিবারগুলোর মাঝে তেমন ঈদের আনন্দ নেই। সরকারি সহযোগিতা পেলে কিছু পরিবার তাদের বাচ্চাদের জন্য নতুন জামা-কাপড় কেনার পাশাপাশি ঈদের দিনে সবাই মিলে আনন্দ করতে পারতেন।’
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক নিজাম উদ্দিন বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন ব্যক্তিদের তালিকা অনুসারে সরকারি সাহায্য প্রদান করা হয়। বেদে পরিবারগুলো তালিকাভুক্ত না হওয়ায় তাদের সহযোগিতা করা সম্ভব হয়নি। বেদে পরিবারগুলো আবেদন করলে তাদের সহযোগিতা করা হবে।

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED