Loading Now

বরিশালে সর্বোচ্চ ১,০৭১ কোটি টাকার আয়কর আদায়

 

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

জনবল সংকটসহ নানামুখী সীমাবদ্ধতার সাথে করোনা মহামারীর দুটি অর্থ বছরের অর্থনৈতিক স্থবিরতা এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে বরিশাল কর অঞ্চলে গত অর্থবছরে এযাবতকালের সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭১ কোটি টাকা আয়কর আহরণ সম্ভব হয়েছে। যা আগের অর্থ বছরের চেয়ে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা বেশি। প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ২৪ শতাংশ বলে জানা গেছে।
২০০১-০২ অর্থবছরে মাত্র ২৩ কোটি টাকা আয়কর আদায়ের মধ্যে দিয়ে বরিশাল কর অঞ্চলের যাত্রা শুরুর পরে গত অর্থবছরে সাড়ে ৯৫০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য অতিক্রম বরিশাল কর প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ অতিরিক্ত সোয়া ২শ’ কোটি টাকা আয়কর আদায়ে সক্ষম হয়েছেন। চলতি অর্থবছরে বরিশাল কর অঞ্চলে প্রায় সাড়ে ১২শ’ কোটি টাকা আয়কর সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। গত জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৩৫৬ কোটি টাকা আয়কর আহরণ সম্ভব হয়েছে। অর্থবছরের শেষ প্রান্তে লক্ষ্যে পৌঁছতে আশাবাদী বরিশাল কর অঞ্চলের দায়িত্বশীল মহল।

তবে গত অর্থবছরে ৯৫০ কোটি টাকা আয়কর আহরণ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ১ হাজার ৭১ কোটি টাকা আয় সম্ভব হলেও মোট প্রায় ৪ লাখ ৫৫ হাজার টিআইএনধারীর মধ্যে মাত্র ১ লাখ ৪১ হাজারের মতো রিটার্ন দাখিল করেছেন। যা আগের বছরে ছিল ১ লাখ ২৭ হাজারের কিছু বেশি। এক অর্থ বছরের ব্যবধানে রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা সাড়ে ১৩ হাজারের মতো বাড়লেও বিপুল সংখ্যক টিআইএনধারী রিটার্ন দাখিল না করার কারণটি অনুসন্ধান করছে কর বিভাগের দায়িত্বশীল মহল।
অপরদিকে গত অর্থবছরে ১.৪১ লাখ রিটার্ন দাখিলকারীর মধ্যে অনলাইনে প্রায় ৬২ হাজার এবং অফ-লাইনে প্রায় ৮০ হাজার রিটার্ন দাখিল হয়েছে বলে জানা গেছে। অন-লাইনে রিটার্ন দাখিলকারীর এ সংখ্যাটা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৫০ হাজার বেশি ছিল। পাশাপাশি অফ-লাইনে রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যাও ১ লাখ ১৬ হাজার থেকে প্রায় ৮০ হাজারে হ্রাস পেয়েছে। চলতি অর্থবছর থেকে সবার জন্যই অন-লাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করেছে রাজীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।

পাশপাশি ২০০১-২০০২ অর্থবছরে বরিশাল কর অঞ্চল প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে মাত্র কুড়ি হাজার রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যাটা গত অর্থবছরে দেড় লাখের কাছে পৌঁছলেও এখনো এ অঞ্চলে বিপুল সংখ্যক মানুষ আয়করের হিসেবে বহির্ভূত রয়ে গেছে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। তবে বিগত দুটি অর্থবছরে এ অঞ্চলে টিআইএন গ্রহণকারীর সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ থেকে সাড়ে ৪ লাখের ওপরে উন্নীত হয়েছে। পাশপাশি চলতি অর্থবছরে রিটার্ন দাখিল ও কর প্রদানকারীর সংখ্যায় আরো প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছার ব্যাপারেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বরিশাল কর অঞ্চলের কমিশনার মো. সাব্বির আহমেদ।

তবে বরিশাল কর অঞ্চলে ব্যপক জনবল সংকট সহ নানা সীমাবদ্ধতা প্রবৃদ্ধির পথে অন্যতম প্রতিবন্ধক হয়ে আছে। বরিশাল কর অঞ্চলের ২২টি সার্কেলে মঞ্জুরীকৃত প্রায় ২৬৫ জনবলের মধ্যে ১৯০ জনের পদায়ন হলেও কিছু কর্মকর্তা প্রশিক্ষণে রয়েছেন। কমিশনার ও অতিরিক্ত কমিশনার পদে কর্মকর্তাগণ দায়িত্ব পালন করলেও ৩ জন যুগ্ম কমিশনারের স্থলে আছেন মাত্র একজন। ২২টি সার্কেলে ৮ জন উপ-কর কমিশনারের বিপরীতে আছেন মাত্র দুজন। ১৩ জন সহকারী কমিশনারের স্থলে আছেন ৬ জন। আর মাঠ পর্যায়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ২৯ পরিদর্শকের স্থলে কর্মরত আছেন মাত্র ১১ জন। ফলে একজন কর্মকর্তাকে একাধিক সার্কেলের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সহকারী কমিশনার থেকে যুগ্ম কর কমিশনার পর্যন্ত সব পদেই ব্যাপক জনবল সংকট বরিশাল কর অঞ্চলে কর আহরণ প্রবৃদ্ধিকেও যথেষ্ঠ বাধাগ্রস্ত করছে বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছেন।

জনবল সংকট থেকে উত্তরণের পাশাপাশি করদাতাদের সাথে আরো নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি সৌজন্যমূলক আচরণ বৃদ্ধির তাগিদ রয়েছে করদাতাদের তরফ থেকেও। পাশাপাশি যেকোন অসত উদ্দ্যেশ্যে ন্যূনতম বাড়তি চাপ সহ হয়রানি পরিহারের বিষয়টির প্রতিও বিশেষ নজরদারির আহ্বান জানান হয়েছে। করদাতাদের সম্মানিত ব্যাক্তি বিবেচনা করে তাদের প্রতি সামাজিক ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার তাগিদ দিয়েছেন একাধিক করদাতা।

কৃষি বরিশাল অঞ্চলের মানুষের প্রধান জীবিকার পাশাপশি কৃষি অর্থনীতিই এখনো মূল চালিকা শক্তি। তবে অন্যান্য ব্যবসা ক্রমে সম্প্রসারিত হলেও ২০২১-২২ অর্থ বছর থেকে করেনা মহামারী সারা দেশের মত এ অঞ্চলের অর্থনীতিতেও যথেষ্ঠ বিরূপ প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি গত জুলই-আগস্টের রাজনৈতিক অস্থিরতাও ব্যবসা-বাণিজ্যে যথেষ্ঠ স্থবিরতা সৃষ্টি করলেও বরিশাল কর অঞ্চলে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল কর অঞ্চলের কমিশনার মো. সাব্বির আহমেদ। এদিকে বরিশালে কর কমিশনারেট-এর জন্য একটি বহুতল ভবন নির্মাণের প্রস্তাব গত প্রায় দেড় যুগ ধরে নানা টেবিলে ঘুরপাক খেয়ে দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা কমিশনের কল্পনার আঁধারে বন্দী আছে। প্রায় ৮০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যায়ের ঐ ভবন নির্মাণ প্রকল্পটি আদৗ আলোর মুখ দেখবে কিনা তা বলতে পারছেন না কেউ। মহানগরীর নিজস্ব ও ভাড়া বাড়িতে ছড়িয়ে ছিটেয়ে আছে বরিশাল কর কমিশনার সহ একাধিক সার্কেল অফিসগুলো।

 

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED