বরিশালে সাধারণ ওষুধেই ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াই
নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
বরিশালের উপকূলীয় এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় জনমনে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। বিশেষ করে প্রান্তিক মানুষ অতিমারির হাত থেকে বাঁচতে স্বেচ্ছায় নালা, ডোবা, নর্দমা পরিষ্কার করছেন। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোও এগিয়ে এলেও মশার উপদ্রব কমানো যাচ্ছে না। ঠিক কী কারণে এই উপদ্রব কমছে না, তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত পাওয়া গেছে।
বরিশালে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো সবচেয়ে বড় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বিডিক্লিন’-এর প্রায় ৯০০ কর্মী প্রতিদিনই পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালান। সংগঠনটির বিভাগীয় সমন্বয়ক জায়েদ ইরফান বলেন, পরিচ্ছন্নতার ধারাবাহিকতা না থাকায় লার্ভা ধ্বংস হয় না।
নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলখালে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হয়। আমরাও তাতে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু খালটি পরিষ্কারের কয়েকদিন পরেই আগের অবস্থায় ফিরে যায়। খালের দেখভালকারী কর্তৃপক্ষ তদারকি করেনি, আর স্থানীয় বাসিন্দারা আগের মতোই ময়লা ফেলা অব্যাহত রেখেছে। ফলে লার্ভার উৎপত্তি আবারও শুরু হয়েছে।
সচেতন নাগরিক কমিটি বরিশাল’-এর সভাপতি অধ্যাপক গাজী জাহিদ হোসেন বলেন, কিছু অঞ্চল এখন ‘হাব অব ডিজিজ’-এ পরিণত হয়েছে। আমরা প্রায়ই দেখি সিটি করপোরেশন বা পৌর কর্তৃপক্ষ জনগণের ওপর দায় চাপান, বলছেন জনগণের অসচেতনতায় এই অবস্থা হয়েছে। অথচ প্রতিটি সেক্টরেরই গাফিলতি রয়েছে।
তিনি বলেন, এটি স্বল্পমেয়াদি কোনো কাজ নয়। সব মহলের সমন্বয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। বর্ষার আগেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচিত ছিল নগর কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক করতে উদ্যোগ নেওয়া। একইভাবে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভারও উচিত ছিল কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। এখন দেখা যাচ্ছে, যে ওষুধ মশা মারতে ছিটানো হচ্ছে, তাতে মশা মরছে না। এর কারণও খুঁজে বের করা দরকার।
মশক নিধন অভিযানে ব্যবহৃত ওষুধ কতটা কার্যকর তা জানতে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি পৌরসভার এক সাবেক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ছোট পৌরসভায় মশার ওষুধ খুব কমই কেনা হয়। দায়িত্বে থাকাকালে দেখেছি, যে ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে মশার কোনো ক্ষতি হচ্ছিল না। মশার যেমন বিভিন্ন প্রজাতি আছে, তেমনি মশক নিধনের ওষুধও ভিন্ন ভিন্ন ধরনের। আমার জানা মতে, অনেক পৌরসভা নিম্নমানের ওষুধ কেনে, আর এসব ওষুধ বছরে এক বা দুইবার বরাদ্দ হয়।
ভান্ডারিয়া পৌরসভার প্রশাসক রেহেনা আক্তার বলেন, সাধারণত পৌরসভা থেকে চাহিদা অনুসারে ওষুধ কেনা হয়। ভান্ডারিয়ায় এখনো পুরনো ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। আমি চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্রশাসকের দায়িত্ব নিয়েছি। এরপর নতুন করে কোনো ওষুধ আনা হয়নি।
একই চিত্র দেখা গেছে আরও কয়েকটি পৌরসভায়। নতুন ওষুধ সম্প্রতি কোনো পৌরসভায় সরবরাহ হয়নি।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক নীহার রঞ্জন বৈদ্য বলেন, মশা নিধনে যে ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে, তা আদৌ কতটা কার্যকর, তা বিশ্লেষণ প্রয়োজন। আমি মনে করি, এখন যে ফগার বা স্প্রের মাধ্যমে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে, তাতে মশা মারা যাচ্ছে না।
বরগুনার বেতাগী পৌরসভার প্রশাসক বশির গাজী বলেন, মশা নিধনে আমাদের আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই। পৌরসভার নিজস্ব তহবিল থেকেই ওষুধ কেনা হয়। এডিস মশা নিধনের জন্য বিশেষ কোনো ওষুধ নেই, সাধারণত লার্ভা ধ্বংসকারী ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) স্বপন দাস বলেন, বরিশালে সবসময় মশক নিধনে ওষুধ সরবরাহ ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পুরনো ওষুধে মশা মারা যেত না। নিয়মিত ফগিং ও স্প্রে করার পরও মশার উপদ্রব না কমায় ওষুধ পরিবর্তন করে নতুন ওষুধ আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, গত তিন বছরে ব্যবহৃত ওষুধের চেয়ে বর্তমানে ব্যবহৃত ওষুধ অনেক বেশি কার্যকর। ঢাকায়- বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেও এই ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে।
বর্তমানে বরিশাল সিটি করপোরেশনের কাছে ৬,২০০ লিটার ওষুধ রয়েছে। প্রতিদিন ৪০টি ফগার মেশিন ও ৬০টি হ্যান্ড স্প্রের মাধ্যমে মশক নিধন অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
Post Comment