পুলিশী বাধায় পন্ড ‘রামায়ণ’ অনুষ্ঠান
নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ভগবান শ্রী রাম চন্দ্রের আবির্ভাব দিবস উপলক্ষে রাম নবমী উৎসবের ‘রামায়ণ’ অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। হামলার হুমকিতে নিরাপত্তাজনিত অযুহাতে পূর্ব ঘোষিত এই ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার এই অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। তবে পুলিশ বলছে অনুমতি না নেওয়ায় অনুষ্ঠানটি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার বরিশাল নগরীর কাউনিয়ার মনসা বাড়ি গলির কাউনিয়া শ্রীশ্রী মনসা মন্দিরে এই ঘটনা ঘটে। দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত হয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ভগবান শ্রী রাম চন্দ্রের জীবন কাহিনী নিয়ে নির্মিত রামায়ণ নাটক মঞ্চস্থ করতে সর্বোচ্চ বাধা প্রদান করে ধর্মীয় এই অনুষ্ঠান পন্ড করে দেয় বলে অভিযোগ মন্দির সংশ্লিষ্টদের।
শ্রীশ্রী কাউনিয়া মনসা মন্দির পূজা কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য প্রীতম দাস জানান, ভগবান শ্রী রামচন্দ্রের আবির্ভাব দিবস উপলক্ষে বরিশাল বিভাগে সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় আমাদের এই মন্দিরে। এই রাম নবমী উৎসব রীতি অনুযায়ী ৪দিন ব্যাপী করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং সেই অনুযায়ী বরিশাল বিভাগের সর্বত্র প্রচারণা চালানো হয়।
৫ এপ্রিল ভগবান রাম চন্দ্রের প্রতীমা আনা হয় মন্দিরে। ৬ই এপ্রিল পূজা, যজ্ঞ, পুষ্পাঞ্জলী, প্রসাদ বিতরণ ও সন্ধ্যা আরতি অনুষ্ঠিত হয়। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্বলন ও ভগবান শ্রী রামচন্দ্রের জীবন কাহিনী ‘রামায়ন’ নাটক মঞ্চস্থ করার অনুষ্ঠান ছিলো এবং সবশেষ ৯ এপ্রিল সন্ধ্যা আরতি, নগর পরিক্রমা এবং বিসর্জনের অনুষ্ঠান ছিলো। তবে পুলিশ সদস্যরা মঙ্গলবার সকাল থেকে এসেই আমাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বাধার সৃষ্টি করে। মন্দিরে ধর্মীয় অনুষ্ঠান করতে হবে আমাদের এখন পুলিশের অনুমতি নিয়ে?
আরেক সদস্য হৃদয় দাস জানান, আমরা অনেক অনুরোধ করেছি পুলিশ সদস্যদের। তারা বলছেন থ্রেট আছে, তাই প্রোগ্রাম করা যাবে না। আমরা কেন আমাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান করতে পারবো না। আমরা বরিশাল মহানগর পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথেও কথা বলেছি তাদের সমস্যা শুধু রামায়ণ নিয়েই, আর কোনো সমস্যা নেই।
রামায়ণ মঞ্চস্থ এর দায়িত্ব পাওয়া তিলক’স গ্রুপ এন্ড থিয়েটার এর পরিচালক তিলক বসু অনিম জানান, দীর্ঘ দুই মাস যাবৎ আমরা রামায়ণ মঞ্চস্থ করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তবে হঠাৎ করে পুলিশের এমন আগ্রাসী সিদ্ধান্তে আমরা মর্মাহত। আমরা সেনাবাহিনীর কাছেও গিয়েছিলাম, তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলো কিন্তু কোনো ফল আসেনি। বিকালের দিকে সাউন্ড সিস্টেম, ডেকরেটর মালামাল সহ সকল সামগ্রী চাপের মুখে খুলে ফেলা হয়।
উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের সাথে আমরা কথা বলেছিলাম তবে তারা কোনো সদুত্তর দিচ্ছে না। এক এক সময় এক এক কথা বলছে। একবার বলছে অনুমতি নেওয়া হয়নি, আরেকবার বলছে নিরাপত্তাজণিত সমস্যা রয়েছে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এমন বাধা বরিশালে এটাই প্রথম। ধর্মীয় অনুষ্ঠান করতে বরিশালে অনুমতি প্রয়োজন, সেটি আমরা জানতাম না।
এসব বিষয়ে কাউনিয়া শ্রীশ্রী মনসা মন্দিরে উপস্থিত কাউনিয়া থানার উপ পরিদর্শক মোঃ জিসান জানান, এই মনসা মন্দিরে তাদের ধর্মীয় একটি অনুষ্ঠান করার কথা ছিলো। অনুষ্ঠানটি করার জন্য তারা নগর পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে অনুমোদন নেয়নি। পাশাপাশি আমাদের সিনিয়র স্যাররা অনুমোদন দেয়ওনি। যে কারণে অনুষ্ঠানটি করতে আমাদের সিনিয়র স্যারেরা নিষেধ করে গেছেন। সেজন্য আমরা এসেছি যাতে আপাতত অনুষ্ঠানটি তারা বন্ধ রাখে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন কুমার আইচ জানান, এসএসসি পরীক্ষা থাকায় নাটকটির প্রদর্শন বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবে পূজা এবং নগর পরিক্রমাসহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান স্বাভাবিক ভাবেই চলবে।
Post Comment